২০ আগস্ট, ২০১৮ ১৭:১৫

চাহিদা বেশি মাঝারির, আক্ষেপ বড় গরু বেপারিদের

অনলাইন প্রতিবেদক

চাহিদা বেশি মাঝারির, আক্ষেপ বড় গরু বেপারিদের

ঈদুল আজহার মাত্র আর এক দিন বাকি। এরই মধ্যে রাজধানীর হাটগুলোতে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমে উঠেছে। গত দুই দিন ধরে পশুর হাটে ক্রেতা সমাগম আগের চেয়ে বেশি। তবে এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর প্রতি ক্রেতাদের নজর বেশি। ফলে ছোট গরুর ব্যবসায়ীরা দামও হাকাচ্ছেন ইচ্ছে মতো। সেই তুলনায় বড় গরুর ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দাম না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। 

রাজধানীর হাজারীবাগ, গাবতলী, মোহাম্মদপুর বছিলা, পুরান ঢাকার ধুপখোলা, ধোলাইখালসহ সিটি করপোরেশনগুলোর কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটগুলো ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, এই হাটগুলোতে মাঝারি ও ছোট আকারের গরু বেশি আনা হয়েছে। সেই তুলনায় বড় গরু নেই বললেই চলে। 

গতকাল রবিবার থেকেই রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর ডিওএইচএস ও সেতু প্রপার্টিজ সংলগ্ন খালি মাঠে, গোলাপবাগ, ৩০০ ফুট, ১০০ ফুট সংলগ্ন, শনির আখড়া ও আফতাবনগরে কোরবানির হাটে গরুভর্তি ট্রাক আসতে থাকে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত রাজধানীতে প্রায় ৫ লাখ কোরবানির পশু ঢুকেছে। 

বিভিন্ন পশুর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর, জামালপুর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী থেকে ঢাকায় গরু নিয়ে এসেছেন বেপারিরা। এর মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে আনা গরুর সংখ্যাই বেশি। কেউ নিজ খামারে, কেউ বাড়ির পালা গরু নিয়ে এসেছেন।  

রিপন নামে এক ক্রেতা বলেন, বেপারিরা গরুর দাম ধরে রেখেছেন। তারা নিচে নামতে চাচ্ছেন না। যে গরু ৬০ হাজার হওয়ার কথা, তারা ৯০-৯৫ হাজার টাকা চাচ্ছেন। সফিকুল নামে আরেক বেপারি জামালপুর থেকে ২৫টি গরু নিয়ে এসেছেন নতুনবাজার হাটে। তিনি জানান, গরু আনার সময় পথে তার কোনো সমস্যা হয়নি। কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। কিন্তু ঢাকার ভিতরে বিভিন্ন ইজাদারের বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। 

মেরাদিয়া হাটের আবদুস সামাদ নামে একজন জানালেন, টাঙ্গাইল থেকে ট্রাকে করে ১২টি গরু নিয়ে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে তারা ঢাকায় ঢোকেন। তারা গরুগুলো গোলাপবাগ হাটে তোলার জন্য যাচ্ছিলেন। পথে রামপুরা ব্রিজে একই ধরনের লাল টি-শার্ট পরা ২০-২৫ জন যুবক সিগন্যাল লাইট হাতে নিয়ে হুইসেল বাজিয়ে তাদের ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে পথরোধ করেন। অনেকটা বাধ্য করেন তাদের মেরাদিয়া হাটে যেতে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, এবার বড় গরুর বিক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বড় গরুর দিকে তেমন নজর দিচ্ছেন না ক্রেতারা। তারা ছুটছেন ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দিকে। যার ফলে বড় গরুর বিক্রির সংখ্যা খুবই কম। এমনই আক্ষেপের সুর বড় গরুর বেপারিদের মাঝে। 

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বছিলা পুলিশ লাইন হাটে গত রবিবার রাতে নাটোর থেকে ৬টি গরু নিয়ে এসেছেন আসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। তবে এখনো একটিও গরু বিক্রি হয়নি। তবে ক্রেতারা যে দাম করছেন তাতে খুশি নন তিনি। আরও দামের আসায় বসে আছেন তিনি। সেই ব্যাপারী বলেন, আমি যে ৬টি গরু নিয়ে আসছি তার কোনোটার দাম ৮০ হাজার বলছে, কোনোটা ৬০ হাজার। আরও বেশি দাম হলে গরু বিক্রি করবো। তবে এই দাম চলতে থাকলে বেচাবিক্রি করে শান্তি পাব না। 

একই সূর জামালপুরের থেকে আগত গরু বেপারি মো. গুলজার হোসেনের। নিজের ঘরে পালা দুটি আর দুটি গরু কিনে মোট ৪টি গরু নিয়ে গতকাল রবিবার সকালেই বছিলা হাটে উঠেছেন তিনি। গরুর দর-দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরইমধ্যে যে দাম হচ্ছে তাতে খুবই হতাশ। আমি যে দুটি গরু ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি সেই দুইটি এখানে নামার পর দাম হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার। এবার দাম ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না। 

এছাড়া রাজধানীর হাজারীবাগ পশুর হাটেও মাঝারি ও ছোট আকারের গরু বেশি আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেশি জাতের গরুর সংখ্যাই বেশি। প্রতিটি খোয়ারেই দেশি গরু। আকারে ছোট এসব গরুর চাহিদাও বেশি। সোমবার বিকেলের দিকে গরুও যেমন বাড়চ্ছে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে বলে জানান গরুর ব্যাপারীরা। 

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহিন আলম নামে এক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত ক্রেতারা ছোট ও মাঝারি আকারের গরু কিনতে হাটে এসেছি। তবে বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ক্রেতারা। ফলে না পারছি বড় গরু কিনতে, না পারছি ছোট গরু কিনতে। 

আব্দুস জব্বার নামে এক খামারি বলেন, এবার গরুর দাম একটু বেশি। তবে আমাদের প্রফিট কম। কেননা আমরা গরু কিনেছি বেশি দামে, তাই বেশি লাভ করতে পারছি না। আমার খামারে ১৫০টি গরু আছে, যার ১৪৫টিই বিক্রির উপযোগী। তবে প্রত্যাশিত দাম না পেলে খামারেই রেখে দেব। তিনি আরও বলেন, হাটে দেশি গরুর চাহিদা বেশি, দামও বেশি। আমার বেশ কয়েকটি দেশি গরু আছে। সেগুলো সবার আগে বিক্রি হচ্ছে।  


বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর