২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০৮:৫৮
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ বিন মোমেন

'জাতিসংঘের আমন্ত্রণে নয়, বিএনপি এসেছিল নিজ উদ্যোগে'

রুহুল আমিন রাসেল ও কাজী শাহেদ, নিউইয়র্ক থেকে

'জাতিসংঘের আমন্ত্রণে নয়, বিএনপি এসেছিল নিজ উদ্যোগে'

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বিএনপিকে জাতিসংঘের মহাসচিব কোনো আমন্ত্রণ জানাননি। বিএনপি নেতারা নিজ উদ্যোগে দেখা করতে এসেছিল। জাতিসংঘের একটি রাজনৈতিক বিষয়ক বিভাগ আছে। তারা সেখানে যোগাযোগ করে এসেছে। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বিএনপিকে জাতিসংঘের মহাসচিব কোনো আমন্ত্রণ জানাননি।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সম্মেলন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগের দফতরে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দেখা করেন। এটা বিশেষ কিছু নয়। ফলে বিএনপি নেতাদের এমন সাক্ষাতে বাংলাদেশের রাজনীতেতে কোনো প্রভাব পড়বে না।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এবারের অধিবেশনে গতবারের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সারা বছরই গণমাধ্যমকে হাল নাগাদ রেখেছে। জাতিসংঘে এ বিষয়ে যখনই যা হয়েছে তা জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে যা দৃশ্যমান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে ৯০ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি জাতিসংঘকে মানুষের ভবিষ্যৎ আশা আকাঙ্খার কেন্দ্রস্থল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এবারের এই প্রতিপাদ্য জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের সেই অভিষ্ট লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূলতঃ যে সব বিষয়ে অংশ নিচ্ছেন, সেগুলো হলো রোহিঙ্গা বিষয়ক, উন্নয়ন বিষয়ক, বিশেষতঃ শিক্ষা ও নারী অধিকার, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।
জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বলেন, জলবায়ু ঝুঁকির ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে এনিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে। ওইদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কম্যুনিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ২৪ সেপ্টেম্বর বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নেলসন ম্যান্ডেলা পিক সামিটে ভাষণ দেবেন। এর আগে সকালে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। ইভেন্টটির আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ২৯টি দেশের সাথে বাংলাদেশ এর সহ-আয়োজক। উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। একই দিনে শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট ও শিক্ষা বিষয়ক দুটি উচ্চ পর্যায়ের হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য রাখবেন। এতে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও সিঙ্গাপুর কো-স্পন্সর করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। পিস কিপিং বিষয়ক এই ইভেন্টে প্রদেয় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত একটি প্যানেলে যোগ দেবেন। শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ভাষাগত সমস্যার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ভাষা সমস্যা দূর করতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতবারের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশমালার ধারাবাহিকতায় এবারেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন। তাঁর বক্তব্যে থাকবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথার বিষয়গুলো। ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার যে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, সে বিষয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলোও তার বক্তৃতায় থাকবে।

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর