৩০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:২১

আবার আসিব ফিরে এই সংসদে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবার আসিব ফিরে এই সংসদে: প্রধানমন্ত্রী

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আবার আসিব ফিরে এই সংসদে’ বলে শেষ করেছেন জাতীয় সংসদের ২৩তম ও সমাপনী দিবসের সমাপণী ভাষণ। এর আগে জীবনানন্দ দাশের কবিতা আবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়ি নদীটির তীরে, এই বাংলায়’, ..এরপর তুমুল করতালির মধ্যে তিনি হাসতে হাসতে কবিতার সুরেই বলেন ‘আবার আসিব ফিরে এই সংসদে’।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের সমাপনী দিবসের সমাপনী বক্তব্য এভাবেই শেষ করেন তিনি। এরআগে সুকান্ত চট্টপাধ্যায়ের ছাড়পত্র কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, চলে যাব- তবু আজ যতণ দেহে আছে প্রাণ / প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল / এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি / নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে জনগণকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে আবার ক্ষমতায় আনলে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার অঙ্গিকার করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, কেমন বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই এটাই আমাদের চিন্তা। তাদের জন্য সুন্দর বাসযোগ্য দেশ হয় সেটার জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের শেষ সময় এসে গেছে। এটা সংসদের শেষ অধিবেশন। যদি কোন দুর্ঘটনা না ঘটে বা যুদ্ধ-বিগ্রহ না ঘটে তাহলে এটাই শেষ অধিবেশন। এই অধিবেশন সংসদ পরিচালনায় রের্কড সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, আমরা ২২তম অধিবেশনে ১৮টি বিল পাস করেছি। চলতি অধিবশেনে ২৩টি বিল পাস করেছি। সত্যি এটা এই সংসদের রেকর্ড। 

এর আগে নবম অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত নবম সংসদে এই সংসদ ছিল গালিগালাজের। কথা-বার্তা ছিল অবমাননাকর। চেয়ার, মাইক এমনকি নিরিহ ফোল্ডারও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। শেখ হাসিনা বলেন, তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ করব বলেছিলাম। তখন আমাদের অনেক কটুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, দেশের ৯০ ভাগ এলাকায় ব্রডব্যান্ড দিয়েছি, ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ কোটি সিম ব্যবহার হয়। দেশের মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছিল, আমরা তার মর্যাদা রেখেছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলে আমরা দেশকে দারিদ্রমুক্ত করব। তিনি বলেন, আমেরিকার মতো দেশে ১৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ আছে। আমাদের লক্ষ্য আমাদের দেশে দরিদ্রের হার আমেরিকার থেকেও নিচে নিয়ে আসতে পারবো। আর সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়াও অবম্ভব নয়। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরও কিছু সময় দরকার। জনগণ আমাদের ভোট দিলে আমরা সেই অসমাপ্তকাজগুলো শেষ করতে পারবো। আমাদেরকে আরেকবার সুযোগ দিন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের অদম্য অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। সারাদেশে যে উন্নয়নের ছোঁয়া বাংলাদেশ পেয়েছে, তাতে আমি বিশ্বাস করি- বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চই আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। 

তিনি বলেন, ’আপনারা আরেকটিবার নৌকায় ভোট দিন, আরেকটি দেশ সেবার সুযোগ দিন- ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে, এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। দেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা তাদের মর্যাদা রক্ষা করেছি। দেশের জনগণ আমাদের আবারও দেশ সেবার সুযোগ দিলে অবশ্যই দেশকে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলবো। যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাব। 

তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হব। ইতিমধ্যে আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত উন্নয়ণশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এর পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি আসবে। এর জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা খুব দরকার। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখন অনেক কাজ করেছিলাম। ২০০১ সালে নির্বাচনে না জিততে পারায় আমার অসমাপ্ত অনেক পরিকল্পনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালে আবার আমরা ক্ষমতায় আসি। এখন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দিন বদলের সনদ বাস্তবায়ন করে হচ্ছে। মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি। অবকাঠামো উন্নয়ন করছি, বাজেট সাতগুন বৃদ্ধি করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে বেশিরভাগ বাস্তবায়ন করছি। বাংলাদশের মানুষের মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ জেগেছে। পদ্মাসেতু নির্মাণ চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটাও আমরা নিজের টাকায় করে চলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার জীবনে কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার বেঁচে থাকাটাই একটা দুর্ঘটনা। আমার ওপর বারবার আঘাত এসেছে। গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা হয়েছে। আমি জানি যে কোন সময় আমি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারি। এটা জেনেই আমি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ দেশের জন্য, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাব। মানুষকে সুন্দর জীবন দেব, সেজন্য দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি কার স্বার্থে? কার জন্য? আমার নিজের কোন স্বার্থ নেই, জনগণের স্বার্থে-কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। তাই দেশবাসীর প্রতি আমার আবেদন, আবার নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ সেবা করার সুযোগ দিন, বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বিশ্বে বাংলাদেশে যে সম্মান বইয়ে এনেছে, তা ধরে রাখতে হবে। লাখো শহীদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না। 

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর