৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৬:৩৯

সেদিন সুবর্ণচরে যা ঘটেছিল

অনলাইন ডেস্ক

সেদিন সুবর্ণচরে যা ঘটেছিল

প্রতীকী ছবি

গত ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সারা দেশের মতো নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় (নোয়াখালী-০৪) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ণিত নির্বাচনে স্থানীয় পারুল আক্তার সাধারণ ভোটারের মতোই পার্শ্ববর্তী ১৪ নম্বর মধ্যম বাগ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভোট প্রদান করেন। ভোটের দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে পারুল আক্তার গণধর্ষণের শিকার হন। পরবর্তীতে ৩১ ডিসেম্বর বিকালে ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন মর্মে ঘটনাটি প্রচার করা হয়।

ঘটনার দিন থেকে অদ্যাবধি অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশব্যাপী ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সুবর্ণচর উপজেলাধীন চরজুবলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় রুহুল আমিন (বর্তমানে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উক্ত নির্বাচনে পারুল ও তার পরিবার মেম্বার প্রার্থী রুহুল আমীনের পক্ষে কাজ করেন এবং রুহুল আমিন মেম্বার নির্বাচিত হন। 

রুহুল আমীন দীর্ঘ ৫ বছর মেম্বার থাকাকালীন পারুল ও তার পরিবারকে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। গত ২২/০৩/২০১৬ ইং তারিখ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে পারুল ও তার পরিবার পুনরায় মেম্বার প্রার্থী হওয়া রুহুল আমীনের পক্ষে ভোটে কাজ না করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী খলিলের (বর্তমান মেম্বার) পক্ষ হয়ে কাজ করেন। নির্বাচনের ফলাফলে রুহুল আমীন খলিলের কাছে পরাজিত হন। রুহুল আমীন মেম্বার হতে ব্যর্থ হয়ে পারুলের বাড়িতে তার সন্ত্রাসী গ্রুপের লোকজন দিয়ে হামলা চালায়। তখন থেকেই রুহুল আমীন ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপের লোকজনের সঙ্গে পারুল ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। উক্ত দ্বন্দ্বের কারণে রুহুল আমীনের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। 

গত ৩/৪ মাস আগে পারুল ও স্থানীয় আনোয়ারকে পারুলের ঘরে একসঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায় রুহুল আমীনের সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য বেচু মিয়া। এতে বেচু মিয়া এ ঘটনা এলাকার মানুষের সঙ্গে বলাবলি করলে ‘পারুল আনোয়ারের সাথে শুইছে’ বলে এলাকায় কথাটি চাউর হয়। এতে পারুল বেচু মিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। নির্বাচনের ৫/৭ দিন আগে বাড়ির সামনের রাস্তায় পারুলের সঙ্গে বেচু মিয়ার দেখা হলে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে পারুলের হাতে থাকা গামলা দিয়ে বেচু মিয়াকে কয়েকবার আঘাত করে। তখন বেচু মিয়া পারুলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় ও বলে, ‘আনোয়ারের সাথে যা করেছ আমাদের সাথেও তা করতে হবে’। 

৩০ তারিখে অনুষ্ঠিত ভোটের দিন রাতে পারুলের বাড়ির বিপরীত দিকে অবস্থিত মিন্টুর (রুহুল আমীনের সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য) বাড়িতে বসে বেচুর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ী স্বপনের বাড়ি থেকে গাঁজা এনে স্বপন, মিন্টুসহ ৭/৮ জন গভীর রাত পর্যন্ত সেবন করে। নেশাগ্রস্ত ৭/৮ জনকে নিয়ে বেচু মিয়া পারুলের বাড়িতে যায় এবং পুলিশের পরিচয় দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। সবাই মিলে পারুলের স্বামী সিরাজ ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের বেঁধে রেখে পারুলের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। 

এ ঘটনা বিচারের জন্য পারুলের স্বামীসহ স্থানীয় কয়েকজন রুহুল আমীনের কাছে গেলে সে তাদের পাত্তা না দিয়ে তার সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের পক্ষাবলম্বন করে। পরবর্তীতে পারুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয়দের পরামর্শে ও সহযোগিতায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পারুলকে হাসপাতালে ভর্তি করার এক ঘণ্টার মধ্যেই নোয়াখালী-৪ এর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান পারুলকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। এর পরই ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। 

মূলত বিএনপির পক্ষ থেকে মিডিয়াকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় যে, ধানের শীষে ভোট দেওয়ার কারণে পারুলকে গণধর্ষণ করা হয়েছে এবং পারুলকেও এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটিকে ভাইরাল করে দেয়।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর