১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৯:৩১

'সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডিভাইডারই একমাত্র সমাধান নয়'

নিজস্ব প্রতিবেদক

'সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডিভাইডারই একমাত্র সমাধান নয়'

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংসদে বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডিভাইডারই একমাত্র সমাধান নয়। এখানে চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতাও জরুরি। কারণ রাস্তায় দেখা যায় ফুটওভার ব্রীজ থাকার পরেও ডিভাইডার দিয়ে লাফ দিয়ে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন। নারীরা বাচ্চা কোলে নিয়ে রাস্তা পার হন। এমনকি ফ্লাইওভারের এপাশ থেকে ওপাশে হামাগুড়ি দিয়ে মানুষ পার হচ্ছেন। মানুষ সড়কে শৃঙ্খলা মানছে না। মানুষের বিবেকটা এখানে খুব জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটিও করা হয়েছে। 

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার সংসদের বৈঠকে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য সাইফুজ্জামানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, সংসদ সদস্য যারা ঢাকার রাস্তায় চলাচল করেন তারা দেখবেন মানুষ মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছেন। এর মধ্যে গাড়ি এসে চাকায় পিষ্ট করে দিচ্ছে। এখানে কী শুধু চালককে দায়ী করবেন? অনেক গাড়িচালক ট্রাফিক সিগনাল মানেন না। ভিআইপি হয়ে অনেকে রং সাইডে গাড়ি নিয়ে যান। এটা ঠিক নয়। ভিআইপিরা তো অসাধারণ, তারা যদি রং সাইডে চলেন তাহলে সাধারণ মানুষ কেন রং সাইডে যাবে না! 

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে তার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সকল মহাসড়কে ফোরলেনের পাশাপাশি বাইলেন ও ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। সড়ক মন্ত্রণালয় সেইভাবেই কাজ করছে। এরমধ্যে সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা প্রণয়নে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শাজাহান খানের হাসি নিয়ে সংসদে প্রশ্ন শামীম ওসমানের প্রতিবাদ
এদিকে, শাজাহান খানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করায় সংসদে প্রশ্ন তোলেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল। সরকার দলীয় এমপি শামীম ওসমান বিরোদী দলীয় সদস্যের বক্তবের প্রতিবাদ জানান। 

এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম এ বিষয়ে সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘বদিকে দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, শাজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ। গতবার শাজাহান খানের একটা হাসি নিয়ে কতকিছু ঘটলো। সেই শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত কমিটি সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কতটা সক্ষম হবে?’ 

জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য বৈঠকে যখন শাজাহান খানের নাম প্রস্তাব করা হয় তখন কেউ কিন্তু বিরোধিতা করেননি। তার নেতৃত্বে আরও ১৪ জন সদস্য রয়েছেন। এখানে ব্যক্তি কোনো বিষয় নয়। অতীতে কোনো ব্যক্তির স্ফিত হাসির কারণে কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়েছে কিনা সেটা আমি দেখব না। আমি দেখব সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কমিটি কি সুপারিশ তৈরি করে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব। 

এসময় প্রশ্নকারী ফখরুল ইমামের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখুন না, আপনি যতটুকু আশা করছেন তার চেয়েও ভালো রিপোর্ট আসতে পারে।’ 

পরে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে সরকার দলীয় এমপি শামীম ওসমান এই প্রসঙ্গে টেনে প্রতিবাদী কণ্ঠে বলেন, ‘শাজাহান খান একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার হাসির জন্য ঘটনা ঘটেছে নাকি ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, সেটা দেখার বিষয়।’

২৭৪ বিধিতে দাঁড়িয়ে নিজের সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি শাজাহান খানের : 
২৭৪ বিধিতে কৈফিয়ত দিতে দাঁড়িয়ে শাজাহান খান বলেন, বিরোধী দলের এমপি ফখরুল ইমাম মাদক ও দুর্ঘটনাকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছেন, এটা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এসময় তিনি সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, দুর্ঘটনা কমে আসছে আরও কমবে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দুর্ঘটনার প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালককে দায়ী করা ঠিক হবে না। 

পরে তিনি বিরোধী দলীয় সদস্যের বক্তব্য একপাঞ্জ করার অথবা ফখরুল ইমামকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। এরপরই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ফ্লোর চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আর কোনো বিতর্ক হবে না। তবে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলতে চাইলে পরে আপনাকে ফ্লোর দেওয়া হবে। 

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের চালু হবে ডিসেম্বরের মধ্যে :
শহিদুল ইসলামের (লক্ষ্মীপুর-২) লিখিত প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সংসদকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশেষ উদ্যোগে চলমান ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রান্সজিট ডেভেলপমেন্ট (মেট্রোরেলের)প্রকল্পের উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে চলছে। 

মন্ত্রী আরও জানান, উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ স্টেশন বিশিষ্ট উভয় দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম আধুনিক এই বিদ্যুৎ চালিত এলিভেটেড ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২-২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়। এটা একটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প। 

ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে মেট্রোরেল, বিআরটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে :  
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকার দলীয় এমপি এম, আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সংসদকে জানান, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ তে পরিবার প্রতি গাড়ির সংখ্যা সিলিং নির্ধারণের বিধান রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মেট্রোরেল, বিআরটি ইত্যাদি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। এসব পদ্ধতি চালু হলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর