রাজধানীর শাহবাগে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে “একতার বাংলাদেশ” ব্যানারে সাম্য এবং মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন দেশ গড়ার শপথ নিয়েছে সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি-পেশার ছাত্র-জনতা। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য রেখেছেন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতারাও।
বুধবার বিকালে এই শপথ পাঠ করান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক।
শপথ পাঠকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমার প্রতিটি পদচিহ্ন হবে ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখার একেকটি প্রতিরূপ। সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা হবে আমার রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশীজনের সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন। আমার কাছে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়নই হবে ব্যক্তিগত স্বার্থকে সমুন্নত রাখার একমাত্র রক্ষাকবজ। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমার কার্যক্রম এবং চিন্তার পরিসর জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে সব সময় ক্ষমতায়িত করবে। আমি জীবনের যেকোনও পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের সাথে আপোস করব না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যদি নিপীড়নমূলক হয়ে উঠে বা হয়ে উঠতে চায় তার বিপরীতে দাঁড়ানো হবে আমার একান্ত দায়িত্ব। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সকল ধরনের বিভাজনের পথ রুদ্ধ করে বাংলাদেশ হবে সকল মানুষের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের উর্বর ভূমি।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, আমরা এমন একটা সময় এখানে জড়ো হয়েছি যখন আমাদের দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এদেশে আমরা সবসময় সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি। এ দেশের হিন্দু, মুসলিম ও অন্য সকল ধর্মের মানুষ সকল ধর্মীয় উৎসব পাশাপাশি উদযাপন করে আসছে। আমাদের দেশ অন্যদেশের মতো না যেখানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ করা হয়। আগে ব্রিটিশরা ষড়যন্ত্র করেছিল হিন্দু-মুসলিম দাঙা লাগিয়ে নিজেদের সুবিধা নিতে, এখন আবার সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ জানে- কারা এই ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা বলে দিতে চাই- আপনারা যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন তা আমরা বাস্তবায়ন করতে দিব না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, যারা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে বিভিন্ন সিন্ডিকেট গঠন করে দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছেন তাদের সাবধান করে দিতে চাই- তাদের সমূলে উৎপাটিত করা হবে। আমাদের এই বিপ্লবে আগে নিজেদের নৈতিকতার সংস্কার করতে হবে যে, আমরা দুর্নীতি করব না, অনাচার করব না। যারা দুর্নীতি করেছে, ঋণখেলাপী করেছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। এসময় তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর এবং বিশৃঙ্খলা না করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, “যতদিন দেশ থেকে কুচক্রী মহল বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের পাহারায় থাকতে হবে। কোনওভাবেই কুচক্রী মহলকে ছাড় দেওয়া যাবে না। দিল্লিতে পরিত্যক্ত স্বৈরাচার আছেন, অথচ তার ছেলে জয় বলেন, তার মা পদত্যাগ করেনি। সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্যই ভেতরের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে হবে।”
কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, একতার বাংলাদশের সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছি। আমরা একতার বাংলাদেশ চাই। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫২ বছরে কোনও হামলা বা আক্রমণের বিচার পায়নি হিন্দু সমাজ। এ দেশ আমার, আমাদের। আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই না। আমরা একটি পরিবার।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যেখানে আমাদের মন্দির পাহারা দিতে হবে না। মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের এ মুহূর্তে মন্দির পাহারা দিচ্ছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যারা আমাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা দিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, তারা দুর্বৃত্ত। একতার বাংলাদেশ নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
এসময় ‘একতার বাংলাদেশ’ এর মুখপাত্র তাহমীদ আল মুদাসসিরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু সায়েম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক শাফী মোহাম্মদ, ফাদার তপন ডি রোজারিওসহ আরও অনেকেই।
বিডি প্রতিদিন/একেএ