বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ৭৩তম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সর্ব সাধারণের জীবন-যাত্রার মান স্বাভাবিক রাখতে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মিলনায়তনে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নাসিমুল হাই এফসিএস।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম মাইমূন কবির, বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, স্থানীয় সাংবাদিক এম এ আওয়াল, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. চাঁন মিয়া সরকার, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র অফিসার আমির হোসেন আনোয়ার, জুনিয়র অফিসার শাহজাহান, মোহাম্মদ বাছির প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ঋণ বিতরণের পূর্বে এম নাসিমুল হাই এফসিএস বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাহেব অসহায় অসচ্ছল মানুষদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন ২০০৫ সালে। প্রকল্প শুরুর হওয়ার পর থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপ ধারাবাহিকভাবে মানুষের কল্যাণে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করছে। নদী এলাকা বাঞ্ছারামপুরের মানুষ গুলো ঋণ গ্রহণ করে, যেভাবে বিনিয়োগ করছে তারা বেশি দিন আর অসচ্ছল থাকবে না। তাদের সচ্ছল করে তোলাই গ্রুপের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’
ঋণ বিতরণের পূর্বে ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণসহ গরীব অসহায় লোকদের মাঝে ঔষধসহ স্বাস্থ্য সেবা ফ্রি প্রদান করে থাকে। গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মাসিক উপবৃত্তি প্রদান করছে। যাতে অর্থের অভাবে কোনো শিক্ষার্থী ঝড়ে না যায় এবং উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে। গরীব মেয়েদের মাঝে প্রশিক্ষণসহ সেলাই মেশিন বিতরণ করে। বসুন্ধরা গ্রুপ এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যাতে করে তৃণমূল মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসতে পারে। বসুন্ধরা গ্রুপ চাচ্ছে গ্রামের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ গুলোর অর্থনীতির চিত্র পাল্টিয়ে দিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দেশের অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে বিভিন্ন ক্লান্তিকালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশে মহামারি, বন্যাসহ অস্থিতিশীল পরিবেশে বসুন্ধরা সরাসরি আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সারা বাংলার বিভিন্ন এলাকার হতদরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের মাঝে।’
আজ মঙ্গলবার ৪৮১ জন উপকারভোগীর মাঝে ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথমবারে ৫৬ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, দ্বিতীয়বারে ৩০৭ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে ৪৬ লাখ ৫ হাজার এবং তৃতীয়বারে ১১৮ জনকে ২০ হাজার টাকা করে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। এই ঋণ শুধুমাত্র নারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। যা দিয়ে হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল এবং শাক-সবজি চাষসহ ৩২ প্রকার কাজে নারীরা এই ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করে খুবই উপকার পাচ্ছে। এই ঋণের পরিধি প্রথম দিকে শুধু বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা পার্শ্ববর্তী উপজেলা হোমনা ও নবীনগরে বিস্তার লাভ করেছে।
মিরপুর গ্রামের রোহেলা বেগম (৩০) বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। বসুন্ধরার টেহা নিয়া হাঁস-মুরগী পাইলা অনেক লাভবান হইছি। এখন খাওয়া দাওয়ার কোনো সমস্যা নাই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপ যেন ভালো থাকে।’
খোষকান্দি গ্রামের জুলেখা খাতুন (৩৭) বলেন, ‘প্রথমে টেহা নিয়া সেলাই মেশিন কিনছি। মানুষের কাপড় সেলাইও করছি, লগে কাপড়ও বিক্রি করছি। এরপরে গরু কিনছি। সবগুলো টেহা মিলাইয়া বড় ছেলেডারে বিদেশ পাডাইছি। আল্লাহর রহমতে ছেলে-মেয়ে নিয়া অনেক ভালা আছি। এইসকল জোড় পাইছি বসুন্ধরা টেহা দেওনে। আল্লাহর কাছে বসুন্ধরার হগলের লাগি অন্তর থেইক্যা দোয়া করি আল্লাহ যেন তারার ব্যবসা ও সবমানুষ গুলো ভালো থাহে।’
মানিকপুর গ্রামের নার্গিস আক্তার (২৮) বলেন, ‘ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিন, হাঁস-মুরগী লালন পালন কইরা অনেক লাভবান হইছি। প্রথমেতো ঠিক মতো খাবার খাইতে পারি নাই। এখনো আল্লাহর রহমতে খাবারের চিন্তা নাই বসুন্ধরার সবাইকে আল্লাহ সুখে শান্তিতে রাখুক।’