গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে লিফটে প্রাণহানির ঘটনার পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। লিফটে কয়েকদিন ধরে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থাতেই লিফট চলমান রাখার যে অভিযোগ উঠেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে মানবাধিকার কমিশন। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পর্যালোচনা করে সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, নবজাতকের চিকিৎসা করাতে এসে জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। জানা যায়, লিমা আক্তার ও বিদেশ ফেরত জাহিদুল ইসলাম দম্পতির সদ্য ভূমিষ্ঠ মেয়েকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। লিফট ১১ তলায় থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১০ তলায় দরজা খুলে যায়। তবে, পাটাতন না থাকায় পা দেওয়ার পরই নিচতলায় পড়ে মারা যান জাহিদুল ইসলাম।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, লিফটিতে গত কয়েক দিন ধরে সমস্যা দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং কাউকে সতর্কও করেনি। যদি লিফটটি নষ্ট হওয়ার কারণে বন্ধ থাকত বা লিফটম্যান উপস্থিত থাকতেন, তাহলে হয়তো দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, লিফট দুর্ঘটনার ঘটনাটি হাসপাতালের সমগ্র স্বাস্থ্য-সেবাসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতার সংস্কৃতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারে।
কমিশনের সুয়োমটোতে উল্লেখ করা হয়েছে, বারবার এমন দুর্ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফট যেন মানুষ মারার একটি ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এর আগেও এ বছরের ১২ মে ‘গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনের নজরে আসে।
এরপর ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করে কাদের অবহেলায় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হলো, তা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়। এরপরও এ পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ওই হাসপাতালে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত অনভিপ্রেত। ওঠানামা করার জন্য লিফট একটি অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র, নিয়মিতভাবে যার ত্রুটিবিচ্যুতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন হয়। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওই লিফট নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হয় কিনা তা কমিশনের বোধগম্য নয়।
এ প্রেক্ষাপটে, কার বা কাদের অবহেলায় সেখানকার লিফট থেকে পড়ে বারবার মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে (ইলেকট্রিক্যাল) কমিশনের বেঞ্চ-১ এর সভায় হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/