রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

নদী রক্ষা কাজের অনেক ক্ষেত্রে আমরা অসহায় : নৌমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যারা নদী দূষণ ও দখল করে তাদের এ যুগের রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যেমন রাজাকারদের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ সোচ্চার হয়েছিল, আজ এই দখলদারদের বিরুদ্ধে সে রকম সোচ্চার হতে হবে। নদী রক্ষায় আমাদের অনেক চিন্তাভাবনা করে কাজ করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা অসহায় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে পরিবেশ আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, যখন ক্ষমতাশালী মানুষ বা সরকারের কোনো মন্ত্রী নিজেদের অসহায় বলেন, আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন—বাপা আয়োজিত ‘বেপরোয়া দখলে বিপর্যস্ত আদি বুড়িগঙ্গা ও এর ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। বাপা সহসভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রবীণ সাংবাদিক, গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ—বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি—বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আক্তার মোহাম্মদ, ইনস্টিটিউট অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক আখতার মাহমুদ প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল।

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আইনগত জটিলতার কারণে অনেক স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারা যাচ্ছে না।

নদীর প্রাণ যারা ধ্বংস করেন, তাদের রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একাত্তরে রাজাকাররা মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন। এখন নদী দখল-দূষণকারীরা নদীর প্রাণ ধ্বংস করছেন। তারা এ যুগের রাজাকার। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সবাইকে। তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে নদী দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হবে না। এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। দখল ও দূষণকারীদের  বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকেও উদ্যোগ নিতে হবে।

শাজাহান খান বলেন, কল-কারখানার বর্জ্যের ১০০ ভাগের মধ্যে ৬০ ভাগই নদীকে দূষণ করছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ট্যানারি। এ কারণে দূষণের উৎস মুখগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। গাবতলীতে স্থাপনা সরিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ওয়াকওয়ে ও বনায়ন করা হয়েছে। অথচ সেখানে ব্যবসায়ীরা ইট-বালু ফেলেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশের নদীগুলোর দুই পাড় দখল করে ৪০টি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা দখল করে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। আমি নামাজ পড়ি। আমি মুসলমান। আলেম সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন : দখল করা জায়গায় নামাজ পড়া কি সোয়াবের কাজ?

তিনি বলেন, সদরঘাট ও কাচপুরের নদীর দুই দিকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বনায়ন করা হয়েছে। সদরঘাটকে হকারমুক্ত করেছি। বহুবছর পর বড়াল নদীর ওপর নির্মিত বাঁধ ভেঙে দিয়েছি। এখন বড়াল নদীর আশপাশে নদীতে ও পানির স্রোত বেড়েছে। নদীর সীমানা পিলার নিয়ে সমস্যা রয়েছে। ফের জরিপ চালানো হচ্ছে। তারপর সীমানা পিলার করা হবে। তিনি বলেন, ঢাকায় ৪৬টি ছোট বড় খাল রয়েছে। এগুলো দখলমুক্ত করব। ইতিমধ্যে ২টি খাল দখলমুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ঢাকা শহরে নির্মমভাবে বস্তি উচ্ছেদ করা যায়, অথচ নদী দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায় না। নদীকে আমরা ঝিল হিসেবে দেখতে চাই না।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আদি বুড়িগঙ্গা রক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, নদী রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় শাখাকে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে চায় সরকার। একদিকে কামরাঙ্গীর চর, অন্যদিকে মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, লালবাগ, আমলীগোলা নিয়ে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় শাখা বা আদি বুড়িগঙ্গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বুড়িগঙ্গা নদীকে হাতিরঝিলে রূপ দেওয়ার মতো সরকারি পরিকল্পনার সমালোচনা করেন।

সর্বশেষ খবর