মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
পয়লা বৈশাখ

বিকাল ৫টার পর উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান নয়

----ডিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পয়লা বৈশাখে বিকাল ৫টার পর উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে নববর্ষের সকালে নির্বিঘ্নে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বহিরাগত গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিয়ন্ত্রণ নয়, সুশৃঙ্খল অনুষ্ঠান উদ্যাপনের জন্যই নানা উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এবার কোনো ধরনের হুমকি নেই। কিন্তু একটি মহল সব সময়ই পয়লা বৈশাখ ও বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করে। তবে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। তিনি বলেন, টিএসসিসহ রাজধানীর অন্যান্য জায়গায় সন্ধ্যার পর হেঁটে বেড়াতে, গল্প করতে, বৈশাখের রংবেরঙের পোশাক পরে জনগণ আনন্দ উৎসব করবে।

এতে কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। আমরা পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দেব। অনুষ্ঠানের মূল কেন্দ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব ফটক বিকাল সাড়ে ৪টার পর বন্ধ করে দেওয়া হলেও শহরের রাস্তায় বেড়াতে বা আনন্দ উদ্যাপনে কোনো বাধা নেই। তবে নগরবাসীকে জননিরাপত্তার স্বার্থে অনুরোধ করব, বিকাল ৫টার পর উন্মুক্ত স্থানে কোনো কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা নৃত্যানুষ্ঠান করা যাবে না। তবে ইনডোরে, সুরক্ষিত স্থানে রাতে বা সন্ধ্যার পরও বৈশাখী অনুষ্ঠান করা যাবে।

গত পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ও উৎসবকে কেন্দ্র করে টিএসসি এলাকায় নারী লাঞ্ছনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত বছর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল। তার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে আমরা সচেষ্ট থাকব। ডিএমপির পরামর্শ কোনো অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। সবাই যাতে সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠান উদ্যাপন করতে পারে তার জন্য এসব করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রমতে, এ বিধিনিষেধ শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশেই থাকবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ না পরে হাতে রাখলে সমস্যা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তারাও একমত হয়েছেন। কেউ মুখোশ পরবে না, তবে বড় যে ছবিগুলো রয়েছে সেগুলো হাতে ধরে রাখবে। বিগত সময়ে মূল মঙ্গল শোভাযাত্রার পেছনে কিছু বহিরাগত লোককে মুখোশ পরে অংশ নিতে দেখা গেছে। এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এর বাইরেও বিভিন্ন পণ্যের বিপণনের জন্য বিভিন্ন ধরনের টি-শার্ট পরিধান করে বিভিন্ন কোম্পানি চলে আসে, যারা মূল মঙ্গল শোভাযাত্রার পার্ট নয়। যারা চারুকলা কর্তৃক স্বীকৃত নয়, তারা যেন বিপণন বা বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য বিঘ্নিত করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

এর আগে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, মুখোশে মুখ ঢেকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া যাবে না। বিকট শব্দের ভুভুজেলাও নিষিদ্ধ থাকবে।

সার্বিক নিরাপত্তা : পুলিশ জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থাকবে সিসিটিভির আওতায়। রমনা পার্কে তিনটি, সোহরাওয়ার্দী ও শাহবাগে একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ হবে। পকেটমার, ছিনতাইকারী ঠেকাতে থাকবে পোশাকধারী পুলিশের বিশেষ দল ও গোয়েন্দা পুলিশ। উত্ত্যক্তকারীদের ঠেকাতে এবার পুলিশের বিশেষ দল মাঠে থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা এলাকায় বর্ষবরণের উৎসব পর্যবেক্ষণ করা হবে। সোয়াট টিম থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তায়। ডিএমপির সব এলাকায় গড়ে তোলা হবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়। রমনা ও সোহরাওয়ার্দীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা ফটক ব্যবহার করতে হবে। বিকাল সাড়ে ৪টার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। শাহবাগ, রমনা, সোহরাওয়ার্দীর পুরো এলাকা পুলিশের ‘সেন্ট্রাল মাইকিং সিস্টেমে’ থাকবে। সেখান থেকে মানুষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ফুটপাথ এবং রাস্তা ‘হকারমুক্ত’ রাখা হবে। থাকবে পুলিশের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ সেন্টার। কেউ হারিয়ে গেলে সেখানে অভিযোগ জানানো যাবে।

সর্বশেষ খবর