মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

দরপতনের মধ্যেও শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলছে কোম্পানিগুলো

আলী রিয়াজ

চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই পুঁজিবাজারে টানা পতন চলছে। গত তিন মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কমেছে ২২৬.৩০ পয়েন্ট। এই ধারাবাহিক পতনের মাঝেও পুঁজিবাজারে রাইট শেয়ার ছেড়ে এবং আইপিওর মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। চলতি এপ্রিল মাসেই বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ৭২১ কোটি টাকা। তারল্য সংকটে থাকা বাজার থেকে এক মাসে এত টাকা তুলে বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এত বিপুল পরিমাণ টাকার চাহিদায় পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারে দরপতন ঘটছে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে নতুন ফান্ড না আসায় তারল্য সংকট বাড়ছে। এর মধ্যে কোম্পানিগুলো আইপিও ছেড়ে টাকা তুলছে এবং এক মাসেই দুটি কোম্পানিকে রাইট শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এত টাকা উত্তোলন কোনোভাবেই বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, রাইট শেয়ার এবং আইপি অনুমোদন বাজারে নতুন করে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। অনেকেই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে একমির আইপিওর চাঁদা এবং জিপিএইচ ও সামিট পোর্টের রাইটের চাঁদা দিচ্ছেন। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং সেকেন্ডারি মার্কেটের কথা মাথায় রাখা। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি এপ্রিল মাসে একমি ল্যাবরেটরিজ, জিপিএইচ ইস্পাত, সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্স ৭২১ কোটি টাকা তুলছে। এর মধ্যে অতি মূল্যায়িত দরে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করছে একমি ল্যাবরেটরিজ। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি শেয়ারে ৮৫.২০ টাকা ধরে ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে তুলবে ৪০৯ কোটি টাকা। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটি কাট অফ প্রাইস হিসেবে ৭৭ টাকায় শেয়ারটি ছাড়বে। আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড পরিপালনও করেনি। স্ট্যান্ডার্ড পরিপালন ছাড়াই বিএসইসি অনুমতি দিয়েছে।

জিপিএইচ ইস্পাত : ঋণের সুদজনিত ব্যয় থেকে নিজেদের দূরে রাখতে জিপিএইচ ইস্পাত নতুন করে রাইট শেয়ার ছাড়ছে। গত রবিবার থেকে কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু হয়েছে। চাঁদা গ্রহণ চলবে ১২ মে পর্যন্ত। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ৩ আর : ২ রাইট শেয়ার ছেড়ে ২৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা তুলতে যাচ্ছে।

৪ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ টাকা। কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে বেনকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং লঙ্কাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট। এদিকে কোম্পানিটি রাইট শেয়ারের অনুমোদন পেতে নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত দুই দরে হিসাব ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুই হিসাবের খাতগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশেই কিছুটা ব্যবধান ছিল। বিএসইসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল। এই কোম্পানির রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণও পুঁজিবাজারকে বড় ধরনের নেতিবাচক ধাক্কা দিচ্ছে।

সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্স : সেবা খাতের কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ফি-বছর মূলধন বাড়ালেও বিনিয়োগকারীদের কোনো সুফল নেই। উল্টো মূলধন বৃদ্ধির বিপরীতে কোম্পানিটিতে ধারাবাহিকভাবে মুনাফার পরিমাণ কমেছে। এর মাঝেই অ্যালায়েন্স পোর্ট প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা দরে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৬টি শেয়ার ছেড়ে মোট ৫১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা উত্তোলন করছে। এখনো কোম্পানিটির চাঁদা গ্রহণ চলছে। উত্তোলন করতে যাওয়া টাকার মধ্যে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ দিয়ে জমি ও ১৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩০ মার্চ থেকে রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু করে চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। কোম্পানিটির রাইট আবেদনের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে লঙ্কাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এ ছাড়া আন্ডার রাইটার হিসেবে রয়েছে লঙ্কাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, কসমোপলিটন ফাইন্যান্স লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ব্যানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

সর্বশেষ খবর