বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভ্যাট কমানো উচিত

— ড. আকবর আলি খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ অনেক উঁচু। এ হার ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত। গতকাল দুপুরে মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা করেন। ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচি এ সেমিনারের আয়োজন করে।

বাজেট পর্যালোচনা সভায় আকবর আলি খান বলেন, প্রথম যখন ভ্যাট এলো, তখন ১৫ শতাংশ হার অনেক বেশি মনে করা হয়েছিল। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যখন ব্যাপকভাবে ভ্যাট আদায় করা হবে, তখন এ হার কমানো হবে। অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হলে মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, মূসক নিয়ে ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করছেন। আসলে তারা ভ্যাট দেবেন না। ভ্যাট দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী নতুন তিন লাখ করদাতাকে করের আওতায় আনবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। আমি মনে করি, উচ্চহারে কর না বাড়িয়ে ধীরগতিতে বাড়াতে হবে। অন্যথায় বিভিন্ন শ্রেণির অসন্তোষের কারণে বিনিয়োগ ব্যাহত হতে পারে। 

ড. আকবর আলি খান বলেন, কেবল অর্থ বরাদ্দ দিলেই হবে না, প্রকল্পও থাকতে হবে। আবার সেই প্রকল্প কতটা কার্যকর ও দুর্নীতিমুক্ত তারও তদারকি করতে হবে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে যদি তা শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের বেতনেই খরচ হয়ে যায়, তবে শিক্ষার মানোন্নয়নের খরচ কোথায়? বাজেট কেবল ‘উচ্চাভিলাষী’ হলেই চলবে না, বাস্তবায়নযোগ্যও হতে হবে।

ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জের পরিচালক কে এ এম মোরশেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. আবদুল বায়েস। মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থমন্ত্রী সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথা বলেছেন। কিন্তু রাজস্বের মূল অংশ আসে কর থেকে। এবার পরোক্ষ কর ৬১ শতাংশ, এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরাই বেশি চাপে পড়বে। বিশ্বব্যাংকের মতে, চাইল্ডকেয়ার ছাড়া বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় হয়, তাতে বেশি উপকারভোগী হয় সচ্ছলেরাই।

মূল প্রবন্ধে প্রফেসর ড. আবদুল বায়েস সরকার-এনজিও সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ১৯৭০ এর দশকে ব্র্যাক-এর ওরাল স্যালাইন কর্মসূচি, আশির দশকে শিশু-টিকা ও নব্বইয়ের দশকের পর থেকে যক্ষ্মা প্রতিরোধ, বর্গাচাষি ঋণ বিতরণ, হতদরিদ্র সহায়তা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি কর্মসূচি সফল করে ব্র্যাক এখন সামাজিক খাত উন্নয়নে সরকারের পরীক্ষিত সহযোগী। ২০১৬-১৭ সালের বাজেটের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ও মূল্যায়নে বিশেষত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অতিদারিদ্র্য বিমোচন কিংবা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ক্ষেত্রে সরকার-এনজিও সহযোগিতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। এতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যেমন কমবে তেমনি প্রকল্পের ব্যয় সাশ্রয়ী বাস্তবায়ন হার বাড়বে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর