রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে মাঠে নামার নির্দেশ

রফিকুল ইসলাম রনি

সম্প্রতি দেশব্যাপী গুপ্তহত্যা এবং রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর তৃণমূলে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুই দফা দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন নির্দেশনা দেন তিনি। ঈদের পর ধারাবাহিক সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় ১৪ দল ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন তৃণমূলে যাবে। আগামী ১৫ থেকে ২১ জুলাই কেন্দ্রীয় ১৪ দল ঘোষিত ‘দেশব্যাপী প্রতিরোধ সপ্তাহ’ কর্মসূচি ছাড়াও নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করতে আজ ধানমন্ডিতে বৈঠকে বসছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বিগ্ন। গত শুক্রবার সারা রাত তিনি ঘুমাননি। রাতভর জেগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি কূটনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গতকাল সকালে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ফিরলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন সেখানে যান।

এ সময় সম্প্রতি গুপ্তহত্যা ও জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে জনগণকে সচেতন করতে বিশেষ নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ রুখে দাঁড়ালে এ দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবে না। জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললে এটা থামবেই। এজন্য মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় ১৪ দল, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। এর একটু পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মির্জা আজম ও আমিনুল ইসলাম আমিন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদের পর আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূলে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলব।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে, তখন বিএনপি-জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে সারা দেশের সব উপাসনালয়ে স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে সন্ত্রাসীরা পরাজিত হবেই। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ১৪ দল মাঠে থাকবে।

ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে বিশেষ করে ছাত্রসমাজকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে ছাত্রলীগকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ঈদের পর ধারাবাহিক সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব। এ ছাড়া আজ রবিবার কেন্দ্রীয় ও আগামীকাল সোমবার প্রত্যেক জেলা-মহানগর, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করব।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একের পর এক গুপ্তহত্যা ও টার্গেট কিলিংয়ে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও চিন্তিত-উদ্বিগ্ন। এটা বন্ধে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যে কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে নামিয়েছে তা আরও জোরদার করা হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর নেতৃত্বাধীন ১৪ দলকেও মাঠে রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধে রাস্তায় বাসসহ যানবাহনে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়। টানা ৯২ দিন ওই অবরোধ চলাকালে পেট্রলবোমায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমে জনগণকে সংগঠিত করে। তখন ওই পেট্রলবোমার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠলে তা বন্ধ হয়। একইভাবে এ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধেও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য আজ বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক থেকে ঈদের পর সিরিজ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর