শিরোনাম
শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনাথ দশায় নওগাঁর শিশু পরিবার কেন্দ্র

নওগাঁ প্রতিনিধি

অনাথ দশায় নওগাঁর শিশু পরিবার কেন্দ্র

নওগাঁ জেলার একমাত্র সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) কেন্দ্রটি নানা সমস্যায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের এটি পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। সমস্যার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো সমাধান মিলছে না।

নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় জেলা কারাগারের কাছে সরকারি অর্থায়নে এই শিশু পরিবার (বালিকা) কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয় ২০০৩ সালে। এখানে আশ্রিত শিশুদের চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়া, বিনোদনসহ প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়ার কথা। বর্তমানে এই কেন্দ্রে শিশু রয়েছে ১০০ জন। এদের দেখভালের জন্য ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১০ জন। প্রধান গেটে ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’ লেখা থাকলেও কোনো নিরাপত্তারক্ষী গেটে নেই। ফলে যে কোনো সময় যে কেউ ইচ্ছামতো ভিতরে যাতায়াত করতে পারে। জানা গেছে, এখানে শুধুমাত্র রাতে একজন নৈশপ্রহরী পাহারায় থাকেন। শিশু পরিবার অফিস সূত্রে জানা গেছে, সার্বক্ষণিক দারোয়ানের পদ শূন্য রয়েছে। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী তত্ত্বাবধায়ক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে এ পদ দুটি শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া মেট্রন কাম নার্স, কম্পাউন্ডার পোস্ট থাকলেও নিয়োগ নেই। পরিবারে চতুর্থ শ্রেণির পাঁচটি পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র দুজন। এদিকে কারিগরি প্রশিক্ষকের মোট দুটি পদের দুজন শিক্ষকই অন্য জায়গায় কর্মরত। ফলে এখানে কর্মমুখী শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষক না থাকায় শিশু পরিবারের পাঁচটি কম্পিউটারই অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ শিশু পরিবার কর্মসূচির অন্যতম নীতি হলো, মূলধারার শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে অনাথ শিশুদের স্বনির্ভর করে তোলা। শিশু পরিবারের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, পড়ানোর ফাঁকে সময় পেলে কম্পিউটার শেখাতেন তিনি। কিন্তু দুই বছর থেকে নষ্ট হওয়ায় সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এই পরিবারের বাসিন্দারা অবহেলিত হচ্ছে দিনের পর দিন। খণ্ডকালীন একজন চিকিৎসক থাকলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। নেই কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা। এত অবহেলা থাকলেও শিশু পরিবারের শিশুদের এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই।

সরকারিভাবে প্রতি শিশুর খরচ বাবদ ২৬০০ টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা খাবার, প্রাইভেট, চিকিৎসা, কাপড়, তেল, সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করা হয়।

অফিস সহকারী আকবর আলী জানান, রোগবালাই সম্পর্কে কিছু না জেনেও অফিসের পাশাপাশি কম্পাউন্ডারের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই কাজ ঠিকমতো হয় না। শিশু পরিবারের সহকারী শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী তত্ত্বাবধায়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, একজনের দায়িত্ব আরেকজনকে পালন করতে হচ্ছে বলে কোনো কাজই ঠিকমতো কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। জেলা সমাজসেবা অফিসার ও শিশু পরিবারের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুল আলম জানান, লোকবলের সংকট থাকায় প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না। সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো হয়েছে। তারপরেও সাড়া পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান জানান, শিশু পরিবারের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ খবর