সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

নৌ-ধর্মঘট প্রত্যাহারে স্বস্তি বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা পাঁচ দিনের নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। আগের দিন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে গতকাল সব ধরনের নৌযান চলাচল করেছে। সব ধরনের পণ্যবাহী জাহাজে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। এদিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হলেও যাত্রীবাহী নৌযানে এর প্রভাব তেমন পড়েনি। ঢাকাসহ সারা দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্টিমারে গতকালও যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। অনেকেই না জানায় বেশির ভাগ লঞ্চ ছেড়েছে কম যাত্রী নিয়ে। চলমান ধর্মঘট নিয়ে শনিবার রাতে ঢাকার দৈনিক বাংলার মোড়ে শ্রম ভবনে বৈঠকে বসেন শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম ও নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ওয়েজুল ইসলাম বুলবুলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। বৈঠকে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হওয়ায় নৌযান শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন। বৈঠকে নৌযান শ্রমিকরা তাদের বেতন সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা দাবি করলে মালিকপক্ষ ৯ হাজার ৭৫০ টাকা দিতে সম্মতি জানায়। বাকি দাবিসমূহ পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলোচনা সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

সারা দেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সাধারণ যাত্রীরা ধর্মঘটের কারণের কয়েক দিন ধরে নদীপথ এড়িয়ে চলছেন। গতকালও ধর্মঘট সম্পর্কে না জানায় কমসংখ্যক যাত্রী নদীপথে গন্তব্যে ফিরেছেন। ফলে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। লঞ্চমালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রচার কম থাকায় যাত্রীরা আসেননি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে সদরঘাটে পণ্যবাহী যানে পাঁচ দিন ধরে কোনো পণ্য খালাস হয়নি। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণায় পুরোপুরি কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। নারায়ণগঞ্জেও দেখা গেছে একই চিত্র।

মংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহনের কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে বহির্নোঙরে অবস্থানরত বিদেশি ১১টি মাদার ভেসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাসের কাজ চলছে। এতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে মংলা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সোহাগ জানান, নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে মংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথর ও পাইলিং শিটবাহী দুটি জাহাজসহ ১১টি বিদেশি বাণিজ্যিক মাদার ভেসেলে ভোর থেকে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ১৬ ঘাটে লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে শ্রমিক ও মাঝিমাল্লাদের উৎসবে ক্রমেই সরগরম হয়ে ওঠে ঘাটগুলো। সদরঘাট থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর পাড়ে ১৬টি ঘাট আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চানবালি, এ কে খান, বাংলাবাজার, আসাম বেঙ্গল, গ্যাস রেলি, জুট রেলি, আনু মাঝির, এভারগ্রিন, মাঝির ঘাট, আদম ঘাট, কর্ণফুলী ঘাট ও সদরঘাট। ধর্মঘট শুরুর আগে নোঙর করা লাইটার জাহাজগুলোতে শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ব্যক্তিমালিকানাধীন লাইটার জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ খান বলেন, ‘নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়েছে। আমাদের বার্থিং মিটিং শেষে সিরিয়াল নিয়ে বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের কাজ শুরু করেছে লাইটার জাহাজগুলো।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বন্দরের বহির্নোঙরে সাধারণ পণ্যের (জেনারেল কার্গো) ১৮টি, খাদ্যশস্যের তিনটি, সারের সাতটি, সিমেন্ট ক্লিংকারের ২৪টি, চিনির তিনটি, লবণের দুটি জাহাজ অপেক্ষমাণ ছিল। ধর্মঘটের কারণে এসব জাহাজে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া নয়টি কনটেইনার জাহাজ ছিল বহির্নোঙরে। নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন শিল্পোদ্যোক্তা, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। বরিশালে অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর না জানায় যাত্রী কম দেখা গেছে নদীবন্দরে। বরিশাল নদীবন্দর থেকে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।

খুলনায় সকাল থেকে কাজে ফিরেছেন নৌযান শ্রমিকরা। এতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে খুলনা ও নওয়াপাড়া নৌবন্দরে। বন্দরকেন্দ্রিক দৈনিক মজুরিভিত্তিক প্রায় ২০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। কাজ করতে পেরে তারা যারপনাই খুশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে সব ধরনের নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সকালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালবাহী কার্গো জাহাজ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়।

বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিরপূরণ পুনর্নির্ধারণ, নদীর নাব্যতা রক্ষা ও নৌপথে সন্ত্রাস-ডাকাতি বন্ধের দাবিতে ২২ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে নৌযান শ্রমিকরা মংলা বন্দরসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন শুরু করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর