ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর সংগীতের লালনভূমি। এই ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছেন বিশ্ববরেণ্য অনেক সংগীতজ্ঞ। এখানকার সংগীতজ্ঞরাই বিশ্বের দরবারে সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দেন উপমহাদেশের সংগীতকে। পাক-ভারত উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতকে নিজ সাধনাবলে বিশ্ববাসীর দরবারে মহামান্বিতরূপে তুলে ধরেছেন যিনি সেই ক্ষণজন্মা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কৃতী সন্তান সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
আনুমানিক ১৮৬২ সালে নবীনগরের শিবপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সবদর হোসেন খাঁ, মা সুন্দরী বেগম। তার ডাকনাম আলম। বড় ভাই ফকির (তাপস) আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে তার সংগীতের খাতেখড়ি। সুরের সন্ধানে কিশোর বয়সে পালিয়ে গিয়ে যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন তিনি। এখান থেকেই জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, প্যাঁচালি প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন। তারপর কলকাতায় যান সংগীতে দীক্ষা নেওয়ার জন্য। ১৯১৮ সালে তিনি ভারতের মধ্যপ্রদেশের মাইহারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৫২ সালে ভারতের সংগীত আকাদেমি পুরস্কার পান। ’৫৪ সালে আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। ’৫৮ সালে ‘পদ্মভূষণ’, ’৬১ সালে বিশ্বভারতী কর্তৃক ‘দেশিকোত্তম’ ও ’৭১ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন তিনি। ভারতের দিল্লি ও বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে আজীবন সদস্যপদ প্রদান করে। শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন তিনি। ’৭২ সালের আজকের ৬ সেপ্টেম্বর মাইহারের মদিনা ভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিশ্বখ্যাত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মৃত্যুবার্ষিকী দেশ-বিদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলেও নিজ জন্মভূমি শিবপুরে এখনো তার জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকী তেমনভাবে পালিত হয় না। শিবপুরে প্রতিষ্ঠিত আলাউদ্দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ আলোচনা সভা ও সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদ ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু আয়োজন করে মাত্র।