শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার সুন্দরবনের ১৪ জলদস্যুর অস্ত্র সমর্পণ

স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন সুন্দরবনের কুখ্যাত ‘শান্ত বাহিনী’ ও ‘আলম বাহিনী’র প্রধানসহ ১৪ জলদস্যু। এ সময় তারা অতীত কৃতকর্মে অনুতপ্ততা প্রকাশ করেন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার কথা ব্যক্ত করেন। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় বরিশাল নগরীর রুপাতলীতে র‌্যাব-৮ সদর দফতরে আনুষ্ঠানিভাবে আত্মসমর্পণ করেন তারা। এ সময় তারা দেশি-বিদেশি মোট ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং এক হাজার ৮ রাউন্ড গুলি জমা দেন। র‌্যাব-৮-এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবির জানান, বুধবার সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে দিনব্যাপী অভিযান চলার সময় এই ১৪ জলদস্যু র‌্যাবের কাছে ধরা দেন। অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি ও শেখ টিপু সুলতান এমপি, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমীন, ডিজিএফআইর পরিচালক কর্নেল মিজানুর রহমান, র‌্যাব-৮ অধিনায়ক লে. কর্নেল ইফতেখারুল মাবুদ, অতিরিক্ত জিআইজি মো. আকরাম হোসেন, জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানসহ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আত্মসমর্পণের পর সুন্দরবনের আলম বাহিনীর প্রধান সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আলম বলেন, মানুষ ভুল করে। তিনি ভুল করে খারাপ পথে চলে গিয়েছিলেন। এখন ভুল বুঝতে পেরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই জীবন অন্ধকার। ওই জীবন আর ভালো লাগে না। তাই আমি ও আমার সহযোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ভালোভাবে বাঁচতে চাই। তবে আমার বিরুদ্ধে থাকা মামলার বিষয়ে কী হবে এ নিয়ে চিন্তিত।’ আরেক দস্যু সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আবুবকর সিদ্দিক বলেন, তিনিসহ অন্যরা খারাপ জগতে ছিলেন। এখন ভালো হওয়ার আশায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। আত্মসমর্পণকারী শান্ত বাহিনীর প্রধান আবদুল বারেক তালুকদার ওরফে শান্ত বলেন, চার বছর ধরে সুন্দরবনে দস্যুতা করেছেন তিনি। কিন্তু দস্যুতা করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদলাতে পারেননি।

কামাই করেছেন শুধুই বদনাম। তাই সুস্থ জীবনে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে অস্ত্র জমা দিয়ে সহযোগীদের নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি। এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল খুন ও ধর্ষণ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে লঘু অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যারা বেপথে চলে গিয়েছেন কিংবা পথ হারিয়েছেন, কিংবা যারা অনুতপ্ত হয়েছেন, যারা জঙ্গিবাদে চলে গিয়ে পরে অনুতপ্ত হয়েছেন, যারা জলদস্যুতায় চলে গিয়ে অনুতপ্ত হয়েছেন, তাদের ফিরে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী ডাক দিয়েছেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে তারা ফিরে আসবেন, চলে আসবেন, স্বাভাবিক জীবনযাপন করে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ বিনির্মাণে সহযোগিতা করবেন।’ মন্ত্রী বলেন, কেউ নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করলে রাষ্ট্র তাকে পুনর্বাসন করে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার এ ঘোষণা দিয়েছেন। গুটিকয় জঙ্গি-সন্ত্রাসীর জন্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেমে থাকবে না। সরকার কঠোর হাতে সব ধরনের উগ্রবাদ দমন করবে। আত্মসমর্পণ করা ১৪ জলদস্যুর প্রত্যেকের নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। এদের আদালতে সোপর্দ করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া নদীবিধৌত এ অঞ্চলে দস্যু, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি নির্মূলে আধুনিক নৌযানসহ র‌্যাবের আরও একটি ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। দস্যুতা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদ করে কেউ বাঁচতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক।

আত্মসমর্পণ করা ১৪ জলদস্যু হলেন—আবদুল বারেক তালুকদার শান্ত, মনির হোসেন হাওলাদার, দুলাল মোল্লা, ফরিদ হাওলাদার, আনিছুর রহমান মোল্লা, বশির আহম্মেদ শেখ, ফরিদ গাজী, মোস্তফা শেখ, নুরুল ইসলাম, খোরশেদ শেখ, আলম বাহিনীর প্রধান আলম সরদার, হালিম গাজী, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আসাদুজ্জামান। এদের মধ্যে শান্ত বাহিনীর সবার বাড়ি বাগেরহাট জেলায় এবং আলম বাহিনীর সবার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। এ নিয়ে চলতি বছর তিন দফায় ৬ হাজার ৫২৮টি গুলি এবং ৯৭টি অত্যাধুনিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ সুন্দরবনের পাঁচটি দস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৩৫ জন জলদস্যু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর