শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনাথদের ঠাঁই চাঁদমণি আশ্রম

আবদুল বারী, নীলফামারী

‘কে বলে অনাথদের কেউ নেই? অনাথরা আর অনাথ নয়। চাঁদমণি আশ্রম অনাথদের দিয়েছে মাথা গোজার ঠাঁই। দিয়েছে বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা, লেখাপড়ার সুযোগ। করেছে ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা। দিয়েছে জীবনের নিশ্চিত নিরাপত্তা।’ দেড় যুগ ধরে এভাবেই ঠাঁই দিয়ে চলেছে নীলফামারীর এই চাঁদমনি আশ্রম।

আশ্রমটি চালাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আলহাজ পিজিরুল আলম দুলাল। জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নে তিস্তা নদীর প্রধান খালের কোল ঘেঁষে চাওড়াডাঙ্গী গ্রামে এক একর সাত শতক জমির ওপর এই চাঁদমনি আশ্রম। পিজিরুল আলম দুলাল উত্তরা ব্যাংকের এজিএম পদে থাকা অবস্থায় অবসর নিয়ে ফিরে আসেন গ্রামে। সালটি ছিল ১৯৯৯। ভাবতে থাকেন কী করবেন? অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন, সমাজের অবহেলিত বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত শিশুদের জন্য গড়ে তুলবেন আশ্রম। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। টাকার জোগান দিতে নিজের ৪২ বিঘা জমি বিক্রি করে গড়ে তোলেন চাঁদমনি আশ্রম। অবসর ভাতার ১১ লাখ টাকাও আশ্রম চালাতে ব্যয় করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আশ্রমে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে ঠাঁই পেয়েছে ৫৫জন এতিম। আশ্রমে রয়েছে কম্পিউটার, লাইব্রেরি, পড়ার টেবিল। চাঁদমনিতে শুধু এতিমদের আশ্রয়ই দেওয়া হয়নি, তাদের লেখাপড়া করানো হয়। দেওয়া হয় বিয়ে। আশ্রিত এতিমরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে লেখাপড়া করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাঁদমনির আশ্রিতরা করছে হাতের কাজ। রয়েছে খেলাধুলা, সংগীত চর্চা। এভাবে এই এতিমরাই এখন একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করছে। যেখানে গ্রামের নিরক্ষরদের দেওয়া হচ্ছে অক্ষর জ্ঞান। এতিম মেয়েরাই যৌতুক, এসিড ও সন্ত্রাস নির্মূলে সচেতনতা বাড়াতে এলাকায় কাজ করছে। চালাচ্ছে ধূমপান ও মাদকবিরোধী আন্দোলন। সরেজমিন চাঁদমনির আশ্রমে প্রবেশ করলে দেখা যায়, চিরায়ত বাংলার হারিয়ে যাওয়া কিছু উপকরণের নমুনা। গরুর গাড়ি, পালকি, ঢেঁকিসহ ১৯৭১ সালের গণহত্যার জলঢাকা কালীগঞ্জ বধ্যভূমির শহীদদের তালিকা।

আরও আছে আবাসিক কন্যাদের জন্য পড়ার কক্ষ। এখানে পিজিরুল আলম নিজেই শিশুদের  প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়ালেখার তদারকি করেন। বর্তমানে তার কিছু আত্মীয়স্বজন, চাকরি জীবনের সহকর্মী ও কিছু দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় চাঁদমনি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে। স্বজনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি তাকে মাঝেমধ্যে কিছু অনুদান দিয়ে থাকেন।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া পিজিরুল আলম দুলাল বলেন, চাঁদমনি এতিমদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। চাঁদমনি চালাতে মাঝে মধ্যে হিমসিম খেতে হয়। পড়ে যাই অর্থ সংকটে। তখন স্বজন ও দয়ালু ব্যক্তিরা হাত বাড়িয়ে দেন। এভাবেই চলছে আশ্রম।

সর্বশেষ খবর