শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাকিস্তানের আচরণই সার্ক শীর্ষ বৈঠক বর্জনের কারণ

‘দ্য হিন্দু’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রতিদিন ডেস্ক

পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ‘হতাশ হলেও’ ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসার পেছনে ভারত ও বাংলাদেশের কারণ ভিন্ন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫-১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে গণভবনে তার এই সাক্ষাৎকার নেন দ্য হিন্দুর সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা পাকিস্তানের পরিস্থিতির কারণে। পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ সব জায়গায় ছড়িয়েছে, যে কারণে আমাদের অনেকেই পাকিস্তানের ওপর হতাশ। ভারত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে সরে এসেছে উরি হামলার কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কারণটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো : দ্য হিন্দু : ১৯৮০’র দশকে সার্কের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এ বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসা দেশগুলোর একটিও বাংলাদেশ। তাহলে কি সার্কের দিন শেষ? শেখ হাসিনা : না, আমরা আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছি, সার্ক অঞ্চলের বিরাজমান পরিস্থিতি সম্মেলন অনুষ্ঠানের উপযোগী নয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আমাদের কিছু স্পর্শকাতরতা আছে, যেখানে পাকিস্তান আমাদের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়েছে, এমনকি বিষয়টি তাদের সংসদেও তুলেছে। অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। যেহেতু এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়, সেহেতু আমরা এতে মর্মাহত হয়েছি। আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, এটা নিয়ে তাদের ভাবার কথা নয়। পাকিস্তানের এ ধরনের আচরণের কারণে দেশটির সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমার ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি সম্পর্ক থাকবে এবং আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। তবে মোদ্দা কথা হলো, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জয় পেয়েছি এবং তারা ছিল পরাজিত শক্তি। আমরা যুদ্ধে জিতেছি এবং তাদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করেছি এবং এটা প্রত্যাশিত যে, তারা এটা ভালোভাবে নেবে না। দ্য হিন্দু : পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত হওয়া সন্ত্রাসবাদ কী আপনার সামনে প্রধান সমস্যা নয়? বাস্তবে, উরি হামলার পর একই সময়ে বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান ও ভারতের সার্ক সম্মেলন বর্জন করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে একঘরে করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনা : পাকিস্তানের পরিস্থিতির কারণে আমরা সার্ক সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে সন্ত্রাসবাদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ এবং ওই সন্ত্রাসবাদ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, যে কারণে আমরা অনেকে পাকিস্তানের ওপর হতাশ। ভারত ও পাকিস্তানেরও দ্বিপক্ষীয় সমস্যা রয়েছে এবং আমি সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। ভারত (উরির হামলার কারণে) সার্ক বর্জন করেছে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য কারণটা সম্পূর্ণই ভিন্ন। দ্য হিন্দু : সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত আপনি সমর্থন করেন? শেখ হাসিনা : আমি মনে করি, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) অলঙ্ঘনীয়তা মেনে চলা উচিত, যা শান্তি নিয়ে আসবে। দ্য হিন্দু : কিন্তু আপনি কি এ নীতি সমর্থন করেন? গত বছর সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে ঢুকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার (ভারত)। একই ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে হলে আপনি কি সমর্থন করবেন? শেখ হাসিনা : আমার মনে হয়, এই প্রশ্নটি আপনার দেশের সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে করা উচিত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এসব সীমানা, নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলা উচিত।

 

দ্য হিন্দু : আপনাকে প্রশ্নটা করছি কারণ, ২০০৯ সালে আপনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপনার সরকারের সাঁড়াশি অভিযান, জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা ও ২০ জনেরও বেশি শীর্ষ সন্ত্রাসীকে হস্তান্তর। সেই সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার এখন কী অর্থ?

শেখ হাসিনা : আমি মনে করি, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের শেকড় গজাতে দেওয়া যাবে না। সেটা ভারত হোক বা মিয়ানমার, যাদের সঙ্গেই আমাদের সীমানা রয়েছে... ২০০৮ সাল থেকে পদক্ষেপ নিয়ে আসছি, তার ফলও দেখছেন। আমাদের সীমান্তজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই সহিংসতা, বোমা বিস্ফোরণ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলত এবং আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। অন্য কোনো দেশে জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য কোনো গোষ্ঠীকে আমরা আমাদের মাটি ব্যবহার করতে দেব না। বাংলাদেশ আর সন্ত্রাস পাচারকারী দেশ নয় বা আগের অস্ত্র পাচারের জন্য সিল্ক রুটও নয়, যা আগে ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর