শিরোনাম
সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘কবি শামসুর রাহমান কবিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেন’

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

‘কবি শামসুর রাহমান কবিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেন’

স্মৃতিচারণ, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে যৌথভাবে কবিতার প্রাণপুরুষ কবি শামসুর রাহমানের ৮৮তম জন্মদিন উদ্যাপন করেছে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদ। গতকাল বিকালে একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে এই আয়োজনে কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, কবি রবিউল হুসাইন, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা এবং অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমি ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদের সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ। বক্তারা বলেন, কবি শামসুর রাহমান বাংলা কবিতার উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের একজন। আবহমান বাংলার জনজীবন ও প্রকৃতির রূপময় বর্ণনায় যেমন তার কবিতা ভাস্বর তেমনি আমাদের সাহিত্যিক-সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাপচিত্র হয়ে আছে তার কবিতাভুবন। মধ্যবিত্ত জীবনের একান্ত অনুভব-উপলব্ধিকে যেমন তিনি কবিতায় তুলেছেন তেমনি মানুষের কণ্ঠকে ভাষা দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিন মানে বাংলাদেশের কবিতারই জন্মদিন। তারা বলেন, এদেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হলেও শামসুর রাহমানের কবিতাই প্রকৃত ইতিহাসের বিশ্বস্ত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। তিনি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পর্যন্ত ইতিহাসের প্রতিটি বিন্দুকে স্পর্শ করে গেছেন। শামসুর রাহমানের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান। তিনি বলেন, শামসুর রাহমান যেমন পরিবারের একান্ত আপনজন ছিলেন তেমনি বাংলার মানুষও ছিল তার বৃহত্তর ভালোবাসার সংসার। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সবসময় ছিলেন অবিচল।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শামসুর রাহমান তার মৌলিক কবিতার সুর প্রতিষ্ঠা করে বাংলা কবিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেন। পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসন যখন বাঙালির মৌলিক অধিকার হরণ করতে শুরু করে তখন শামসুর রাহমান কবিতার অক্ষরে অক্ষরে বাঙালির নিজস্বতার কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে ভিয়েতনামের যুদ্ধ পর্যন্ত তার কবিতার বিষয়বস্তু হয়েছে অবলীলায়। মানুষের শুভ ও কল্যাণের কথা কবিতায় কী করে উচ্চারণ করতে হয় শামসুর রাহমানের কবিতা তার উদাহরণ হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানকে নিয়ে লেখা কবি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। আবৃত্তিতে অংশ নেন লায়লা আফরোজ, শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং তামান্না সারোয়ার নীপা।

শামসুর রাহমানকে নিবেদিত কবিতাপাঠে অংশ নেন— কবি কাজী রোজী, সাযযাদ কাদির, রবীন্দ্র গোপ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, বদরুল হায়দার, পিয়াস মজিদ প্রমুখ। সংগীত পরিবেশন করেন শারমিন সাথী ইসলাম ও সুমা রায়।

অন্যদিকে, কবির ৮৮তম জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ‘স্মৃতিতে কবি শামসুর রাহমান’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। লেখক জাদুঘর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা, কবিতাপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে সাজানো হয়েছে এ আয়োজন।

গতকাল সন্ধ্যায় উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কবি কাজী রোজী এমপির সভাপতিত্বে এতে কবির জীবন ও কর্মের ওপর বক্তৃতা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান আজিজ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি অসীম সাহা। পিদিম থিয়েটারের শিশুদের পরিবেশনায় কবিকে নিবেদিত ‘আমার বাংলা’ শীর্ষক গীতিনাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের প্রদর্শনীতে কবির নানা বয়সের নানা মাত্রিক ছবি স্থান পেয়েছে। আজ শেষ হবে কবিকে নিয়ে দুই দিনের এই আয়োজন। বিকাল ৫টায় সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

সর্বশেষ খবর