শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতু এলাকায় জুমার নামাজ আদায় করলেন ওবায়দুল কাদের

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম জুমার নামাজ আদায় করলেন পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার দোগাছি সার্ভিস এরিয়া জামে মসজিদে। নামাজ আদায় শেষে মন্ত্রীর অনুরোধে মসজিদের ইমাম মাওলানা আনোয়ার হোসাইনের পরিচালনায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সবার জন্য এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ সময় দেশবাসীর বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সরকারের সফলতার জন্য দোয়া করা হয়। এর আগে মন্ত্রী গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় শ্রীনগরের দোগাছি এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া-১-এর সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বতর্মান সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৩৯ শতাংশ। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে ৩৫টি পাইলিংয়ের কাজ। বিশ্বব্যাংক চলে যাওয়ার পর পদ্মা সেতু সংশয় ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসী সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে এবং এর কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে বিশ্বে আমাদের জাতির সম্মান জড়িয়ে আছে। এ সময় মন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তখন সব সাংবাদিক আমার সঙ্গে ছিলেন। তারা শুরু থেকে আজ অবধি নিষ্ঠার সঙ্গে পদ্মা সেতুর সব সংবাদ পরিবেশন করে সেতু বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। এ সময় মন্ত্রী সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানান, মূল সেতুর দুটি স্প্যান প্রকল্প এলাকায় চলে এসেছে। এর মধ্যে একটি অ্যাসেম্বলিং চলছে। দু-তিন মাসের মধ্যেই মূল সেতুতে প্রথম স্প্যান বসানো হবে। এরপর প্রতি ১৫ দিনে এক একটি করে মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানবাহী আরও একটি জাহাজ চীন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

 এ ছাড়া প্রথমে ২ হাজার ৫০০ টন ভারবাহী জার্মান হ্যামার এবং পরে আরও ২ হাজার টন ভারবাহী এশটি হ্যামারের সাহায্যে দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নদী শাসনের ২৫ শতাংশ, সার্ভিস এরিয়া টু এ ৯৯ শতাংশ, অ্যাপ্রোচ রোড মাওয়া প্রান্তে ৯৯ শতাংশ ও জাজিরা প্রান্তে ৮২ শতাংশ। দ্রুতগতিতে মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম, সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের প্রমুখ।

এ সময় মন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর প্রথম জুমার নামাজ আদায় করতে পদ্মাপাড়ে ছুটে এসেছি। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে চেষ্টা করি এখানে জুমার নামাজ আদায় করে দেশবাসীর প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পদ পেলেও পদ্মা সেতুর কাজের ব্যাঘাত ঘটবে না। এ পদ পাওয়ায় আমার কাজের গতি আরও বেড়েছে। পদ্মা সেতুর কাজের তদারকি আমি আগের চেয়ে আরও বেশি করতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমি আমার নেত্রীকে অনুসরণ করি। আমার নেত্রী খুব ভোরে ওঠেন এবং ফজরের নামাজ আদায় করে নিয়মিত পবিত্র কোরআন পাঠ শেষে দিনের কাজ শুরু করেন। আমিও খুব ভোরে নামাজ আদায় করে কাজে নেমে পড়ি। সুযোগ পেলেই পদ্মাপাড়ে ছুটে আসি। আমি যেখানেই থাকি না কেন পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির খবর নেওয়ার জন্য আমার মন অস্থির থাকে। এটা আমার নেত্রীর স্বপ্ন, এটা দেশ ও জাতির স্বপ্ন আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমার প্রধান টার্গেট। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমি আগে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেক অভিযোগ শুনতাম কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না। এখন আমার কিছু করার সুযোগ এসেছে। বড় কোনো কিছু ছাড়া আমি নিজেই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জন্য সিদ্ধান্ত দিতে পারব। বড় কিছু হলে আমার নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। মন্ত্রী আরও বলেন, সময়ের পাখিদের আমি চিনি। যারা দলের জন্য দেশের জন্য প্রাণপণ কাজ করেন তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।

এর আগে মন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় এবং প্রথম জুমার নামাজ আদায় করতে মুন্সীগঞ্জের পদ্মা সেতু এলাকায় তাকে প্রথম পেয়ে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে ছোট্ট শিশু ফারদিনা লাবলু ঐশী। এ সময় মন্ত্রী ঐশীকে আদর করে ফুলের মালা পরিয়ে ভালোবাসা জানান। পরে মন্ত্রীকে স্থানীয় সাংবাদিক ও পুলিশের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে পৃথক শুভেচ্ছা জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর