শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বজনহারা ৫ নাতি-নাতনি নিয়ে বৃদ্ধা ছবিয়ার সীমান্ত পাড়ি

মো. আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

পুত্র জাহেদ হোসেন এবং পুত্রবধূ গুলবাহাকে মিয়ানমার সেনারা প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করেছে। বসত বাড়িটিও পুড়িয়ে দিয়েছে। কোনো রকমে প্রাণে রক্ষা পায় ৫ শিশু। সেই ৫ শিশু নাতি-নাতনিকে নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছেছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা দাদি ছবিয়া খাতুন। আশ্রয় নিয়েছেন লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ- ব্লকে।  টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিন পরিদর্শনকালে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহকালে কথা হয় বৃদ্ধা ছবিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের মংডু টাউনশিপের আওতাধীন কয়ারিপ্রাং গ্রামে ছিল তাদের বসবাস। পুত্র জাহেদ হোসেন (৩৩) এবং পুত্রবধূ গুলবাহাকে (২৭) মিয়ানমার সেনারা প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করেছে। বসত বাড়িটিও পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার ভবিষ্যৎ বংশধর কোনো রকমে প্রাণে রক্ষা পাওয়া ৫ জন শিশু নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সাহস করে তাদের নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছি।’ শিশু নাতি-নাতনিরা হচ্ছে, ইয়াসমিন আক্তার (১৩), মো. রফিক (১১), মো. শাহিন (৯), মো. ইয়াসিন (৭) ও ফাতেমা বেগম (৫)। তিনি জানালেন মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতন-অত্যাচারের লোমহর্ষক ঘটনা।

তার সঙ্গে এসেছেন একই গ্রামের স্বামীহারা আনোয়ারা বেগম (৩০)। স্বামী রশিদ আহমদকে (৩৮) মিয়ানমার সেনারা প্রায় এক মাস আগে ধরে নিয়ে যায়। আর ফিরে আসেনি। অসহায় স্বামীহারা আনোয়ারা বেগম পিতৃহীন ৫ এতিম শিশু নিয়ে চলে এসেছেন জীবন বাঁচার তাগিদে। ৫ শিশু হচ্ছে, ইয়াসমিন আক্তার (১৫), মো, রফিক (১২), মো. শফিক (১০), মো. করিম (৭), রুশ্নী (৫)।

 তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন স্বামীহারা লাইলা বেগম (৩০) ৬ জন শিশু সন্তান আক্তার হোছন (১৫), মো. আলম (১৩), শায়েকা (১১), শরিফা (৯), তকি (৭) ও আবদুর রহিম (৫) এবং জবাই করে হত্যা করা মো.আয়ুবের বিধবা স্ত্রী লাইলা (৪৫), শিশু সন্তান রওসিয়া বিবি (১৮), আশেকা বিবি (১৬), রূপচান বিবি (১২), হোছন আহমদ (১০), আজিদা বিবি (৮)।

নাফ নদী থেকে রোহিঙ্গাবাহী ১১ নৌকা ফেরত :  টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফের নাফ নদীর বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকালে রোহিঙ্গা বোঝাই ১১টি নৌকা  মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল ভোরে নাফ নদীর বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এদের ফেরত পাঠানো হয় বলে জানায় বিজিবি। এতে ১২০/১৩০ জন নারী, পুরুষ শিশু ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। টেকনাফের ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, বুধবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত নাফ নদীর বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকালে জলসীমার শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাবাহী ১১টি নৌকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রতি নৌকায় অন্তত ১০/১২ জন করে রোহিঙ্গা ছিল। এ ছাড়া বিজিবির অবস্থান নির্ণয় করে স্থানীয় দালালরা সীমান্তে দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এ সব দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানায়।

সর্বশেষ খবর