মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফাঁসির পলাতক আসামি রাজাকার কমান্ডার গাজী মান্নানের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ফাঁসির আসামি পলাতক রাজাকার কমান্ডার গাজী মান্নান গতকাল ভোরে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মান্নানের বাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলার চরপাড়া গ্রামে। দুপুরে ওই বাড়িতে লাশ আনা হয়। পরিবারের লোকজন মাইকিং করে জানিয়েছিল যে, করিমগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা হবে। কিন্তু বাধা দেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

 সংসদ ইউএনও এবং থানাকে লিখিতভাবে জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত মান্নানের জানাজা হতে পারে না।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেহেদী উল আলম ও করিমগঞ্জ থানার ওসি জাকির রাব্বানী জানান, অবশেষে গাজী মান্নানের বাড়িতেই জানাজা শেষে লাশ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।

আবদুল মান্নান ১৯৭১ সালে ছিলেন করিমগঞ্জ থানার রাজাকার কমান্ডার। তার নেতৃত্বে কালীপুর গ্রামের আবু বকর ও মোলামখার চর গ্রামের রুপারী মিয়াকে হত্যাসহ বহু বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের খবর পাওয়া যায়। ১৯৭৫-এর পর তিনি ‘গাজী’ মান্নান নাম ধারণ করেন। ২০১০ সালের ২ মে করিমগঞ্জের আয়লা গ্রামের শহীদ মিয়া হোসেনের ছেলে গোলাপ মিয়া তার পিতা হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত ২০১৩ সালে মামলাটি মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর গাজী মান্নানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

চলতি বছরের ৩ মে ট্রাইব্যুনালের রায়ে গাজী মান্নানসহ চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। একজনকে দেওয়া হয় আজীবন কারাদণ্ড। ফাঁসির আদেশপ্রাপ্তরা হলেন, গাজী আবদুল মান্নান, ক্যাপ্টেন (অব.) এটিএম নাসির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট এটিএম শামসুদ্দিন ও হাফিজ উদ্দিন। আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ পান আজহারুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে অ্যাভোকেট শামসুদ্দিন ছাড়া অন্য সবাই পলাতক। 

জানাজায় ইমাম বরখাস্ত : গাজী মান্নানের জানাজায় ইমামতি করায় মাওলানা মোবারক হোসেন বুলবুলকে করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমামের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে, কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গাজী মান্নানের জানাজায় অংশ নিয়েছেন। করিমগঞ্জ ইউএনও আসমা আরা বেগম জানান, অভিযোগ পেয়ে সন্ধ্যায় ইমামকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তাই মাওলানা বুলবুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম জানান, গাজী মান্নান তাকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। তিনিও তাকে পিতার মতই দেখতেন। তাই জানাজায় অংশ নিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর