রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কুয়াকাটা নিয়ে এখনই মাস্টার প্ল্যান করুন

অর্থমন্ত্রী

নিজামুল হক বিপুল, কুয়াকাটা থেকে

গতকাল উদ্বোধন হয়েছে কুয়াকাটা বিচ কার্নিভাল ২০১৭। তিন দিনব্যাপী এ কার্নিভালের উদ্বোধন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতেই এ কার্নিভালের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, কুয়াকাটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। এখনই এ সমুদ্রসৈকত ঘিরে যে মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে তার কাজ শুরু করতে হবে। তাহলে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। এখানে অপরিকল্পিত কোনো কিছু গড়ে উঠবে না।

তিনি বলেন, এ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ও পায়রা বন্দরের আবিষ্কার করেছেন একজন নারী। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের চাকরি জীবনের স্মৃতিচারণা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ থেকে ৬০ বছর আগে আমি পটুয়াখালী এসেছিলাম। তখনো এ কুয়াকাটা ছিল। তার প্রায় ২০ বছর পর আরেকবার এসেছিলাম। সে সময়ও কুয়াকাটা ছিল।

কিন্তু আমি কখনো এর নাম শুনিনি।’ তিনি বলেন, ২০০৫ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়াকাটা এসে তিন দিন থেকেছিলেন। তখনই তার নজরে আসে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। তিনিই একে পর্যটন স্পট হিসেবে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যটন স্পটকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কুয়াকাটা বিষয়ে দ্রুত একটা সেমিনার করুন। একটা কর্মপন্থা তুলে ধরতে হবে। ওই সেমিনার থেকে যেসব মতামত আসবে তার ভিত্তিতে কুয়াকাটাকে সাজাবেন। ওই মতামতকে কার্যপত্র হিসেবে নিয়ে কাজ করুন।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের ভাগ্য ভালো। কক্সবাজারকে তো এখন মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে সাজাতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন হবে। অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু কুয়াকাটায় সেই কষ্ট করতে হবে না।’ তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপনারা দ্রুত পরিকল্পনা নিয়ে সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিন। কুয়াকাটার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন। সেটা জলপথে হতে পারে, সড়কপথে হতে পারে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে এখন কাজ শুরু করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিচের পাশাপাশি বন্দর থাকলে ভালো হয়। আপনারা খুবই ভাগ্যবান যে, এখানে পায়রা বন্দর হচ্ছে। এটি হলে অনেক সুবিধা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের মেয়াদ আছে আর দুই বছর। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। বাকিগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এজন্য স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। দেশে এখন সেই অবস্থা বিরাজ করছে। এখন আর আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয় না। ধর্মঘট হয় না। বিরোধী দল বিএনপি তা বুঝেছে। তারা এটা পরিহার শুরু করেছে। মানুষ এখন কাজে ব্যস্ত।’

বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, স্থানীয়দের মধ্যে পর্যটন মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কারণ এটা চোখে দেখা যায়, স্পর্শ করা যায় না। কিন্তু এখান থেকে প্রচুর অর্থ আয় করা যায়। তিনি বলেন, ‘সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটায় একটা ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের চেষ্টা করছি তিন বছর ধরে। কিন্তু ভাঙন ও উচ্চ আদালতের একটা নির্দেশনার কারণে এটি করতে পারছি না। এখানে একটি বিমানবন্দর নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।’

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, সংসদ সদস্য খ ম জাহাঙ্গীর, মাহবুবুর রহমান তালুকদার, শওকত হাচানুর রহমান রিমন, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার; এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান; স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক প্রমুখ।

কার্নিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সকালে শহরের পর্যটন মোটেলের সামনে থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালি; যাতে নেতৃত্ব দেন পর্যটনমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা নেচে-গেয়ে র্যালিতে অংশ নেন।

অব্যবস্থাপনায় ভরা কার্নিভাল : কুয়াকাটা বিচ কার্নিভাল ঘিরে গতকাল সকালেই কয়েক শ লোকের উপস্থিতি ঘটে কুয়াকাটায়। যাদের মধ্যে একটা বড় অংশই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমন্ত্রিত অতিথি। কিন্তু বিচে তৈরি মঞ্চের সামনের অডিয়েন্সে বসা নিয়েই নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয় আমন্ত্রিত অতিথিদের। একইভাবে তাদের জন্য যে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেও ছিল অব্যবস্থাপনা। কুয়াকাটায় অবস্থিত পর্যটন করপোরেশনের রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু অতিথির সংখ্যা দুই শতাধিক হলেও খাবার তৈরি হয় মাত্র ১০০ জনের। ফলে দুপুরের খাবারে বসে অনেককেই খালি মুখে ফিরতে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর