বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
যুবদলের নতুন কমিটি

নেতারা মামলার আসামি প্রকাশ্যে আসাই চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমিটি ঘোষণার পরদিন গতকাল জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু গিয়েছিলেন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এ সময় কয়েকশ নেতা-কর্মীও আসেন কার্যালয়ের সামনে। নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে কার্যালয় প্রাঙ্গণ। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি শীর্ষ দুই নেতা। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েই দ্রুত মোটরসাইকেলে করে চলে যান তারা। জানা যায়, যুবদলের এই দুই নেতার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে অন্তত অর্ধশত মামলায়। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে এমন মামলার সংখ্যাও কম নয়। শুধু এই দুই নেতাই নন, আংশিক কমিটির প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মামলার খড়গ ঝুলছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, হুলিয়া নিয়ে প্রকাশ্য কর্মসূচিতে যোগ দেওয়াই নতুন কমিটির নেতাদের বড় চ্যালেঞ্জ। তারা গোপনে থেকে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করাও কঠিন হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নেও সমস্যার সৃষ্টি হবে। দীর্ঘ সাত বছর পর ঘোষণা হলো যুবদলের পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অন্য তিনজন হলেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের আংশিক কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি করা হয়েছে এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনকে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শফিকুল ইসলাম মিল্টনকে। সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল রিয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফউদ্দিন জুয়েল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেলকে। মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, সিনিয়র সহ-সভাপতি শরিফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাঈদ হাসান মিন্টু, আর টি মামুন, আনন্দ শাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে জামাল উদ্দিন খান শাহিনকে। তিন বছরের জন্য ঘোষিত এই কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে নতুন কমিটির নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এদিকে ঘোষিত কমিটি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নেতৃত্বের দৌড়ে যারা ছিলেন তাদেরই কমিটির শীর্ষ পর্যায়ে রাখা হয়েছে বলে নেতা-কর্মীদের বড় অংশই মনে করছেন। তবে শীর্ষ দুই নেতা নীরব ও টুকুর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার পরোয়ানা ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। এসব মামলায় জামিন না নিয়ে তারা অনেকটা আত্মগোপনে রয়েছেন। হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকা দুই শীর্ষ নেতা সংগঠনের পক্ষে কতটা প্রকাশ্যে কাজ করতে পারবেন এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা। কমিটি নিয়ে ক্ষুদ্র একটি অংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ্যে কেউই কোনো কথা বলছেন না।

জানা যায়, যুবদলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ। কিন্তু তাকে বিএনপিতে সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। এরপরও তিনি যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন তিনি। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছিলেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক আর সুপার ফাইভের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু। কিন্তু তাদের সেখানে জায়গা হয়নি। যুবদলের একটি সূত্র জানায়, পিংকুকে এক নম্বর সহসভাপতি অথবা ২ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে। এ নিয়ে পিংকুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে আনন্দ শাহকে দক্ষিণ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা নিয়েও প্রকাশ্যেই সমালোচনা হচ্ছে। গতকাল নয়াপল্টনে যুবদলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আনন্দ শাহ মাদক মামলার আসামি। তাকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পুরো কমিটিই ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

নতুন কমিটির শোডাউন : গতকাল সকাল থেকেই নতুন কমিটির নেতাদের বরণ করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। তারা এই সময় থেমে থেমে নীরব-টুকু পরিষদ, সবার সেরা পরিষদসহ নানা স্লোগান দেয়। দুপুর ১টার দিকে সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু কার্যালয়ের সামনে আসেন। তাদের সঙ্গে আসেন সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। কেন্দ্রীয় এসব নেতার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটির নেতারাও ছিলেন। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তা আমরা অক্ষুণ্ন রাখব। সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু বলেন, আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন। এবারের কমিটি হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। কোয়ালিটি সম্পন্ন কমিটি হবে। তা ২৭১ সদস্যের বেশি নয়।

সর্বশেষ খবর