বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
মুক্তি পেয়ে রসরাজ বললেন

ফেসবুক নিয়ে কিছুই জানতাম না

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ফেসবুকে কী হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন রসরাজ। বিলে মাছ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ করে একদল লোক এসে তাকে মারধর শুরু করে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আটক হওয়ার দিনের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করেন রসরাজ দাস। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্টের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার হন রসরাজ। ৮০ দিন পর গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি জামিনে মুক্তি পান। রসরাজ নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে। নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রসরাজ বলেন, ‘আমি আমার জীবন লইয়া চিন্তায় আছি। জেলহানায় থাহনের সময় লোকজনকে কতা কইতে হুনছি যে জেল থেইক্যা ছাড়া পাইয়া এলাকায় গেলে নাকি লোকজন আমারে মাইরধর করব।’ তাই প্রশাসন ও পুলিশের কাছে নিজের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানান রসরাজ। রসরাজ আরও বলেন, ‘আমি ফেসবুক চালাইতে জানি না। পাসওয়ার্ড কিতা এইডাও বুঝি না। আমার একটা দামি টাচ মোবাইল আছিল। হেইডা দিয়া ফেসবুক চালাইতাম। আর ছবি দেখতাম। জলে পড়নের ভয়ে বিলে যাওনের সময় মোবাইলডা বাড়িতে রাইখা যাইতাম।’ ফেসবুক কে খুলে দিয়েছে, জানতে চাইলে রসরাজ বলেন, ‘ঘটনার মাস তিনেক আগে ফেসবুকে ছবি দেখবার লাইগ্যা চাচাতো ভাই হৃদয়রে ফেসবুক খুইল্যা দিতে কইছিলাম। ওই দিন সকালে বিলে থেইক্যা বাড়িতে যাওনের সময় রাস্তায় কজন পুলাপান আমারে ধইরা মাইরধর শুরু করছে। পরে আমারে ধইরা নিয়া পুলিশের কাছে দিয়া দিছে।’

 রসরাজ আরও জানান, ফেসবুকে পোস্ট হওয়া ধর্মীয় অবমাননাকর সেই ছবিটি তিনি এখনো দেখেননি।

রসরাজ আরও বলেন, ‘আমি পুরা নির্দোষ। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কেডা বা কারা ছবি দিছে, আমি কইতাম পারি না।’ তবে যারা ফেসবুকে এই ছবি দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান রসরাজ।

বাড়ি যাওয়ার আগে রসরাজ বলেন, ‘এখন বাড়িত মা-বাবার কাছে যামু। সেখানে আগের পেশা মাছ ধরার কাজ আবার শুরু করমু।’

রসরাজকে নিতে কারাফটকে এসেছিলেন তার মামা ইন্দ্রজিৎ দাস, বড় ভাই দয়াময় দাস ও ভগ্নিপতি নেপাল চন্দ্র দাস। পরে তাদের সঙ্গে দুপুরের দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিজ বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন।

কারাফটকে রসরাজের মামা ইন্দ্রজিৎ দাস বলেন, ‘গ্রামে গিয়ে আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেই রসরাজের বাড়িতে থাকা না-থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘রসরাজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নাসিরনগর উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমরা তত্পর আছি।’

সর্বশেষ খবর