বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওরা খেলায় নেমে গেছে : শামীম ওসমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘যড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। ১০০ জন এমপির নামের তালিকা করা হয়েছে। ওরা খেলায় নেমে গেছে। লিটন হত্যা, নেত্রীর প্লেনের ইঞ্জিনে আগুন—সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। অনেকে অপেক্ষায় আছেন সকালে কেউ বলবে প্রিয় দেশবাসী..।’ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান এ কথা বলেন। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি আইন করে সংসদ সদস্যদের প্রোটেকশন দাবি করে বলেন, হয় প্রোটেকশন দেন, না হয় ছেড়ে দেন। সাধারণ মানুষ বানিয়ে দেন, তারা দেখবে সাধারণ মানুষের কত শক্তি। লাখো মানুষ নিয়ে তাদের অফিস ঘেরাও করব। তিনি বলেন, যদি আমাদের মধ্যে কেউ অপরাধী হয়, তদন্ত হওয়া উচিত।  বিভিন্ন পত্রিকার সমালোচনা করে শামীম ওসমান বলেন, ওরা পরিকল্পিতভাবে এমপি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হনন করছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে ডেইলি স্টার পত্রিকার মিথ্যা সংবাদের কারণে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে জেলে জেতে হয়েছে, দুর্নীতির বদনাম নিতে হয়েছে। মাহফুজ আনাম নিজে সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজে তা স্বীকারও করেছেন।

তিনি আরেকটি পত্রিকার সমালোচনা করে বলেন, তারা এই সংসদের সদস্যকে মাদকসম্রাট বানাচ্ছেন। তিনি সরকারের সুযোগ-সুবিধা নেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিচয় দেন, একাত্তরের পুরো সময় ধরে যিনি অবজারভারে চাকরি করেছেন, গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য স্বাক্ষর করেছেন, গোলাম আযমের সংগ্রামী জীবন বইতে নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে—তার পত্রিকায় আমাকে মাদকসম্রাট বানাতে রিপোর্ট করেছে। এই সংসদের সদস্যকে তিনি মাদকসম্রাট বানাচ্ছেন। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ড্রাগ ডিলার, খুনি তো দূরের কথা—ইসলামে যা নিষিদ্ধ তার কোনো কিছু করেছি, এমন ঘটনা যদি প্রমাণ করতে পারেন, এই সংসদে দাঁড়িয়ে কানে ধরে জুতার মালা পরে বেরিয়ে যাব।

শামীম ওসমান ১৬৪ ধরায় সংসদে বক্তব্য রাখার সুযোগ দাবি করে বলেন, কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যদি লেখা হয়, তাহলে তিনি যেন সংসদে ১৬৪ ধারায় সংসদে এসে কথা বলতে পারেন। সেই সুযোগ দিতে হবে। এমপি লিটনকে যদি সেই সুযোগ দেওয়া হতো—হয়তো তাকে এভাবে মরতে  হতো না।

শামীম ওসমান ৩০ মিনিট ধরে আবেগময় ভাষায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাকে উৎসাহিত করেন। তার বক্তব্যের পর স্পিকারের চেয়ারে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, লিটন হত্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই ভাষণের মেসেজ হলো আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া আপনি রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে যে বক্তব্যের অবতারণা করেছেন, সেখানে কিছু করার নেই। তবে বিধি অনুযায়ী নোটিস দিয়ে আলোচনা করলে রুলিং দেওয়া যেত। আপনি নোটিস দেন। আমি চেয়ারে থাকলে রুলিং দেব।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সাংবাদিকদের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের মাঝে মাঝে আইটেম করা হয়। আমাদের দিয়ে রূপকথা সাজিয়ে গল্প লেখা হয়। মানুষ পড়ে আনন্দ উপভোগ করে, পত্রিকা চলে। কিন্তু আমাদের মান মর্যাদা কোথায় যায় সেটা আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না মাননীয় স্পিকার। ফিরোজ বলেন, আমাদের নিয়ে যখন কথা হয় তখন এই সংসদ প্রটেকশন দেয় না। যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, আজকে যখন আমাদের চরিত্র নিয়ে কথা বলা হয় তখন নিঃসন্দেহে মনে হয় আমার রাজনৈতিক জীবনের সব প্রাপ্তি ব্যর্থ। তিনি বলেন, আমরা আজ দেখতে পাই হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা কিছু রাজনীতিবিদ চাটুকায় রাতারাতি নেতা হয়ে সর্বনাশ করছেন। ক্ষমতায় আছেন তো বুঝবেন না। ক্ষমতা চলে গেলে বুঝবেন কত ধানে কত চাল হয়।

সর্বশেষ খবর