রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বকেয়া চাওয়ায় দোকানিকে মেরে তালা দিলেন যুবলীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘ভাই, আমার দোকানে বাকির কোনো খাতা নাই। আপনার কাছে তিনশ ছয়টা টাকা পাই। কয়বার চাইলাম, দিলেন না। আপনি নেতা মানুষ। মালিকরে আমি কী জবাব দিমু।’ লন্ড্রি দোকানির এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তাকে টেনে-হিঁচড়ে দোকান থেকে নামালেন ওই নেতা। তারপর শুরু করলেন চড়-থাপড়, লাথি-ঘুষি। অন্য দোকানিরা তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গেলে তাদের গায়েও পড়ল কয়েক ঘা। শেষে নিজেই সেই দোকানে তালা মেরে দিলেন ওই নেতা। আর যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘এই দোকান আর খুলবে না।’ ওই নেতার নাম মো. আলতাফ হোসেন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক। গতকাল রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের সাংবাদিক আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর বাড়ির ওয়ালিদ ড্রাই ক্লিনার্সে গিয়ে তিনি এ ঘটনা ঘটান বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১টার দিকে ওয়ালিদ ড্রাই ক্লিনার্স নামক লন্ড্রিতে আসেন যুবলীগ নেতা আলতাফ হোসেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি উত্তেজিত হয়ে দোকান কর্মচারীকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি ওই দোকানের মালিককেও মারার জন্য খুঁজতে থাকেন। পরে তাকে না পেয়ে একটি তালা এনে শাটার ফেলে নিজ হাতে দোকানে মেরে বন্ধ করে দিয়ে যান। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘এই দোকান আজ থেকে বন্ধ থাকবে।’

দোকানের আহত কর্মচারী মিলন বলেন, ‘আলতাফ নেতা প্রায়ই অন্য লোক দিয়া দোকানে কাপড় পাঠায়া দেন। ডেলিভারির সময় টাকা চাইলে তারা বলে, টাকা আলতাফ ভাই দিবেন। তার সঙ্গে দেখা হইলে তিনি শুধু বলেন, পরে দিবেন। এভাবে এর আগেও আমার বহু টাকা মাইর গেছে। আইজকা তো পাওনা টাকা চাইয়া মাইরই খাইলাম।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দোকানি জানান, তাদের দোকানের সামনে নিজের মালিকানার গণপরিবহনের বাস রেখে প্রতিনিয়তই রাস্তা আটকে রাখেন আলতাফ। এতে তারা ব্যবসায়িকভাবে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতিবাদ করার সাহস পান না। উল্টো সেই গাড়ি পাহারার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৫০টি দোকান থেকে ২৫০ টাকা করে আদায় করা হয় দোকানিদের কাছ থেকে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের শ্যালক মনোয়ার হোসেন বাবুলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন আলতাফ এবং বিভিন্ন সময় তাদের একসঙ্গে আড্ডা মারতেও দেখা যায়। নাশকতার মামলায় বাবুল জেলে থাকার সময় তাকে মামলা থেকে বাঁচানোর আশ্বাসে তার কাছ থেকে আলতাফ একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার উপঢৌকন হিসেবে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেই গাড়িতেই এখন চলাফেরা করেন তিনি। এসব বিষয়ে যুবলীগ নেতা আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘ওই লন্ড্রি কর্মচারীকে আমি একটি চড় দিয়েছি। তবে আমি নিজ হাতে তালা দিইনি।’ গাড়ি উপঢৌকন নেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমি ওই গাড়ি কিনে নিয়েছি।’ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক হয়ে যুদ্ধাপরাধীর নিকটাত্মীয়র গাড়ি নৈতিকভাবে কিনতে পারেন কিনা— এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর