মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিফাতকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় স্বামীর ১০ বছর কারাদণ্ড

আদালত প্রতিবেদক ও রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে স্বামী মোহাম্মদ আসিফ প্রিসলিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে সিফাতের পরিবার। গতকাল ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ আসামিদের উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। সিফাতের স্বামীকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া সিফাতের শ্বশুর অ্যাডভোকেট হোসেন মোহাম্মদ রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নজলী ও প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান জোবাইদুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে। সিফাতের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে রায়ে বিবেচনা করেছেন বিচারিক আদালত। আদালতে উপস্থিত সিফাতের মা ফারজানা বানু রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মেয়েকে হত্যার সব আলামত আছে। শরীরে জখম ছিল। ওরা আমার মেয়ের হাতটিও ভেঙে দিয়েছিল। প্রথম ময়নাতদন্তে তা প্রকাশ না পেলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে তা স্পষ্ট হয়েছে। আসামিরা বরাবরই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। সব প্রমাণ আছে, নথি আছে। এর পরও এমন রায়ে আমরা হতাশ। আমরা অবশ্যই উচ্চ আদালতে আপিল করব।’ ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে সিফাতের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার। সিফাতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

সিফাত আত্মহত্যা করেছেন বলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রথমে দাবি করলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পান চিকিৎসক। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে মামলাটির তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে থাকলেও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী সুপার আহমেদ আলী গত বছর ২৩ মার্চ চারজনকে আসামি করে রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তাতে বলা হয়, আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যু হলেও তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর চেষ্টা করেন। এ ছাড়া প্রথম ময়নাতদন্তের চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করে আত্মহত্যার মিথ্যা প্রতিবেদন দেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যৌতুকের দাবিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয় অভিযোগপত্রে। সিফাতের শ্বশুর ও মামলার আসামি হোসেন মোহাম্মদ রমজান রাজশাহীর আদালতের একজন আইনজীবী। বিচারকের প্রতি অনাস্থার কারণ দেখিয়ে বাদী পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ১২ জুলাই মামলাটি রাজশাহী থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবু্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জনের মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর