বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের তাণ্ডব

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে নিজেদের ইচ্ছামতো ছাত্র তুলতে রাতভর তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সোমবার রাতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডব চালায় ছাত্র সংগঠনটি। এ সময় তারা আবাসিক শিক্ষকদের ধাওয়া দিয়ে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় ভাঙচুর ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বিজয় একাত্তর হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস হল প্রশাসনই নিয়ন্ত্রণ করে। একমাত্র এ হলেই আসন সংকটকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনীতি করতে পারে না। তারা চাইলেই বিভিন্ন কক্ষে কর্মী তুলতে পারে না। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অনেকবার চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হয়নি। হলের একজন আবাসিক শিক্ষক জানান, হল ছাত্রলীগের সভাপতি ফকির রাসেল এবং সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের নেতৃত্বে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে। হলের প্রাধ্যক্ষ শফিউল আলম ভুঁইয়ার সামনেই তার কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফকির রাসেল। তিনি বলেন, গণরুমের ছেলেরা এটা করেছে। আমরা তাদের থামাতে পারিনি। হলের কিছু শিক্ষার্থী জানায়, সোমবার রাত ১২টার দিকে হলের উত্তর পাশের যমুনা ব্লকের প্রত্যেক কক্ষে এক-দুজন করে শিক্ষার্থী জোর করে তুলে দেয় ছাত্রলীগ।

খবর পেয়ে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক হলে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।

রাত সোয়া ১টার দিকে হলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আ জ ম শফিউল আলম ভূইয়া। তিনি হলে প্রবেশ করলে হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। একপর্যায়ে প্রাধ্যক্ষের কক্ষের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান প্রাধ্যক্ষের কক্ষে যান। তারা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকে কথা বলেন। যেসব কক্ষে অনুমতি ছাড়া ছাত্র তোলা হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে বলেন। এ অবস্থায় ভোর ৪টা পর্যন্ত হলের ভিতরে মাঠে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন।

সাংবাদিককে মারধর : এদিকে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হলের যমুনা ব্লকের ৫০০৩ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী ও বার্তা সংস্থা ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইমরান হোসাইনকে মারধর করে ছাত্রলীগ নেতা তুনান শেখ, এস আর সজীব, পাপ্পু ঢালী, শফিক ফকির, আবদুর রহমান অয়ন, মো. বনী ইয়ামিন, মাহফুজ আহমেদ ও সালাহ উদ্দিনসহ ১০-১২ জন। ইমরান অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, ইমরানের কক্ষেও ছাত্র তোলার চেষ্টা করেছিল ছাত্রলীগ। এতে তিনি বাধা দেন। পরে সংবাদ সংগ্রহ শেষে ঘুমাতে গেলে তাকে মারধর করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া বলেন, হলে বিশৃঙ্খলা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর