রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
শাহজালালে বোমা বিস্ফোরণ

নিহত যুবকই আয়াদ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের গোলচত্বরে পুলিশের চেকপোস্টের কাছে নিহত যুবকই কি আয়াদ আল হাসান? নিহতের মুখমণ্ডল এবং শারীরিক গঠন দেখে তদন্তসংশ্লিষ্টরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন। আয়াদ গত বছর খালাতো ভাই রাফিদ আল হাসানের সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিল। অন্যদিকে গত শুক্রবার রাতে গোলচত্বরের পূর্বদিকের চেকপোস্টে বোমা বিস্ফোরণেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে এ তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। এ ছাড়া এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তি ছাড়াও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে গতকাল সকালে বিমানবন্দর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আযম মিয়া জানান, গতকাল সকালে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৩৭। মামলার বাদী হচ্ছেন বিমানবন্দর থানার এসআই ইয়াছিন খন্দকার। ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, ঢামেকের তিন সদস্যের তদন্তকারী দল গতকাল বেলা ১২টা ৫ মিনিটে ময়নাতদন্ত শুরু করে। ডা. সোহেল মাহমুদ ছাড়াও ময়নাতদন্ত দলে ছিলেন চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস ও কবির সোহেল। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ময়নাতদন্ত করা হয়। ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, নিহত ব্যক্তির শরীরে বাঁধা বোমা বিস্ফোরণের ধরন দেখে তাকে আত্মঘাতী বলেই মনে হচ্ছে। তার পিঠের পেছন থেকে কোমরের নিচের অংশ পর্যন্ত বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে তার পিঠের মাঝ থেকে পরের অংশ। তার স্প্রিন্টার ও শরীরে ৫৪ ইঞ্চি তারের টুকরা পাওয়া গেছে। স্কচটেপ দিয়ে শরীরে বোমা এবং বাঁ হাতের কব্জিতে রেগুলেটরের মতো একটা জিনিস বাঁধা ছিল। তারের বাকি অংশ ছিল কব্জিতে।

এর আগে রাজধানীর আশকোনায় র‌্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে নিহত ব্যক্তির সঙ্গে এই যুবকের কতটুকু সাদৃশ্য আছে জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, আশকোনায় নিহত ব্যক্তির বুক থেকে পুরো অংশ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আর এর বোমা বাঁধা ছিল পিঠের পেছন দিকে। তবে বিস্ফোরণের ধরনে মিল রয়েছে। তিনি আরও জানান, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিহত ব্যক্তির চুল ও দাঁত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ব্যক্তি নেশাজাতীয় কিছু খেয়েছিলেন কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলোর রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। অন্যদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, নিখোঁজ আয়াদ তার মা-বাবার সঙ্গে সৌদি আরবে ছিল। বছর দুয়েক আগে মা-বাবার সঙ্গে দেশে ফেরে। তখন রাফিদ ও আয়াদ দুজনেই ‘ও’ লেভেল পরীক্ষার্থী ছিল। আয়াদের মা মুনমুন আহমেদ  ছেলেকে পড়ানোর দায়িত্ব দেন বোন নীলুফার ইয়াসমিনের বড় ছেলে রাকিবের ওপর। একপর্যায়ে মুনমুন তার ছেলে আয়াদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। আয়াদ মাকে হিজাব পরার ও পরিবারের সবাইকে নামাজ পড়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। আয়াদ এক সময় আধুনিক জীবন-যাপন করত। তার অনেক মেয়েবন্ধুও ছিল। তবে বাড়ি ছাড়ার আগে আয়াদ ও খালাতো ভাই রাফিদ কিছুটা চুপচাপ হয়ে যায়। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথাও কম বলত। গত বছরের ৯ আগস্ট দুই খালাতো ভাই নিখোঁজ হয়। ওই সময় তারা চিরকুটে লেখে যায় ‘আমরা আমাদের পথ খুঁজে  পেয়েছি, আমাদের চলে যাওয়ার জন্য আরেফিনকে দায়ী করো না’। দুজনই মিরপুরের পূর্ব মনিপুরের বাসিন্দা। আরেফিন তাদের মামাতো ভাই। শুক্রবার নিহত ওই যুবকের লাশের আঙ্গুলের ছাপ নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলেও তা থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রুহুল আমিন সাগর জানান, নিহতের নাম-পরিচয় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার পরিচয় নিশ্চিত হতে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশন অফিসে পাঠানো হয়। কিন্তু শনিবার ছুটির দিন বলে ছাপ ব্যবহার করা যায়নি। রাত সাড়ে ৭টার দিকে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন অফিসে নিহতের আঙ্গুলের ছাপ মেলানোর চেষ্টা চলছে। আশা করছি, খুব শিগরিই জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, নিহত ব্যক্তির একটি সম্ভাব্য ঠিকানা আমরা পেয়েছি। মিরপুরের ওই ঠিকানায় পুলিশ নিহতের ছবি নিয়ে গেছে। ওই পরিবারের লোকদের ছবি দেখিয়ে কিংবা তাদের মর্গে নিয়ে নিহতের মরদেহ দেখানো হবে। এতে হয় তো পরিচয় বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ওই পরিবারের লোকজন বলছেন, তাদের সন্তান এসব করতে পারে না। তবুও নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। জানা গেছে, শুক্রবার ঘটনার সময় যুবকের ট্রাভেল ট্রলির ভিতর থেকে বেশ কয়েকটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে তিনটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। আর দ্বিতীয় ধাপে একটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা সময় এক পুলিশ কনস্টেবলসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। তারা ঢামেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর