রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
র‌্যাবের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

উত্থান আর সাফল্য এসেছে জঙ্গি দমনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের এই দিনে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে এই বাহিনীর। ১৪ বছরে পা রাখা এই বাহিনীর উত্থান আর সাফল্য আসে জঙ্গি দমনের মাধ্যমেই। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর অনেক ঘটনার রহস্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে র‌্যাব স্বকীয়তা অর্জন করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ সদস্য ছাড়াও সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় র‌্যাব। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি বলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত ১৩ বছরে র‌্যাবের সক্ষমতা বেড়েছে অনেক। জঙ্গি দমন ছাড়াও নাশকতা প্রতিরোধসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে পুলিশের এই সংস্থাটি। এরই মধ্যে সাধারণ মানুষেরও আস্থার প্রতীক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। যে কোনো বিপদে মানুষ এখন র‌্যাবের কাছেই ছুটে যায়। র‌্যাবও সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। ১৩ বছর আগে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে র‌্যাব আত্মপ্রকাশ করলেও অপারেশনের দায়িত্ব পায় এর কয়েক দিন পর ১৪ এপ্রিল। রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসতে শুরু করে। ওই বছরের ২১ জুন রাজধানীর উত্তরায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানকে ধরার অভিযান দিয়ে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন শুরু করে তারা। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জেএমবি এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উগ্রপন্থি সংগঠনের বিরুদ্ধে র‌্যাব ভূমিকা পালন করে।

র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, আমরা মনে করি র?্যাব তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনসহ বেশ কিছু বিষয়ে র?্যাবের অর্জন অনেক। অপরাধ-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ‘‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে, যা অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে সহায়তা করবে। র?্যাব এখন সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক।’

জানা গেছে, ২০০৬ সালে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ, আত্মঘাতী হামলায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গি আতঙ্ক। ওই সময় শ্বাসরুদ্ধকর বেশ কয়েকটি অভিযান চালায় র‌্যাব। এর মধ্যে আলোচিত ছিল দুটি অপারেশন। একটি ‘অপারেশন মুক্তাগাছা’, অন্যটি ‘অপারেশন সূর্য দীঘল বাড়ি’। এ অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয় জেএমবির শীর্ষ দুই নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইকে।

২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে র‌্যাবের একের পর এক অভিযানে একাধিক জঙ্গি নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে। গেল বছর বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৬৩ জন সদস্যসহ মোট ৯ হাজার ৫০৪ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক, সাংগঠনিক বই, হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‌্যাব ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বেশি আলোচিত হয়। ক্রসফায়ার নিয়ে দেশে-বিদেশে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের। বিগত ১৩ বছরে দেশে-বিদেশে র‌্যাব যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি সমালোচিতও হয়েছে। নানা অপরাধে র‌্যাব সদস্যরা জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাব। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, একটি বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্থান দেখিয়েছে র‌্যাব।

কার্যক্রম শুরুর সময় ব্যাটালিয়ন ছিল সদর দফতরসহ সাতটি। জনবল ৫ হাজার ৫২১ জন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র‌্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। বর্তমানে ১৪টি ব্যাটালিয়নে অন্তত সাড়ে ১০ হাজার র‌্যাব সদস্য কর্মরত রয়েছেন। র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর