শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
‘শেখ হাসিনার হাত ধরে, পথের শিশু যাবে ঘরে’

রাজপথে থাকবে না আর কোনো পথশিশু

আহমদ সেলিম রেজা

রাজপথের সিগন্যাল, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট বা বাসস্ট্যান্ডে ভাসমান দুস্থ শিশু, ভিক্ষুক বা ভবঘুরেদের উপস্থিতি দেশের দরিদ্র ইমেজকে পোর্ট্রেট করে। বিদেশি গণমাধ্যমগুলো এসব ছবি পয়সা দিয়ে কিনে নিয়ে প্রকাশ করে। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে খাটো করে উপস্থাপন করা। উন্নত বিশ্বে রাস্তাঘাটে কোনো দুস্থ শিশু বা ভবঘুরে দেখতে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশও চলেছে উন্নয়নের পথে। এর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। গা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে এলডিসি দেশের তকমা। মাথা উঁচু করে পা বাড়িয়েছে বিশ্বের মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে নতুন অভিযাত্রায়। এ অবস্থায় রাজপথে সিগন্যাল, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট বা বাসস্ট্যান্ডে ভাসমান দুস্থ শিশু, ভিক্ষুক বা ভবঘুরেদের দেখতে চাইছে না সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী রাজপথ-রেলপথ পথশিশু ও ভিক্ষুকমুক্ত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। তবে সংসদীয় কমিটি বলেছে, শুধু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে হবে না, সেটা দৃশ্যমানও হতে হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও চলবে আবার রাজপথ, রেলপথ ও রেলস্টেশনে পথশিশু দেখা যাবে তা হবে না। সরকারের সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান করতে তাগিদ দিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী “পথে কোনো পথশিশু থাকবে না”। এজন্য “শেখ হাসিনার হাত ধরে, পথের শিশু যাবে ঘরে” স্লোগান সামনে নিয়ে পথশিশুদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছি আমরা। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১২টি শাখার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৭ হাজর ২৩৭ দুস্থ শিশুকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৯৭ শিশুকে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা করা হয়েছে। এর মধ্যে পথশিশু ছিল ৭৬৯ জন। বর্তমানে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১২টি শাখার ১ হাজার ৭৪০ জন শিশুকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। শিশু সুরক্ষায় চালু করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন “১০৯৮” টেলিফোন সার্ভিস। নির্যাতিত, নিখোঁজ, পাচারের শিকার ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর বিষয়ে এই নম্বরে টেলিফোন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পৌঁছে যাবে দোরগোড়ায়।’

 

এক প্রশ্নের জবাবে নূরুজ্জামান আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য শুধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনই আটটি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে চলছে পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম। চলছে পরিচয়হীন শিশুদের জন্য ছোটমণি নিবাস কর্মসূচি। সুবিধাবঞ্চিত নির্যাতিত ও শ্রমজীবী শিশুদের সুরক্ষার জন্য সিএসপিবি ও পথশিশুদের স্কার কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এ ছাড়া দেশের ৩ হাজার ৮০০ এতিমখানায় ৭ হাজার ২০০ শিশুর পুনর্বাসন কার্যক্রম চলছে। সরকারিভাবে চলমান ৮৫টি শিশু পরিবার কেন্দ্রে ১০ হাজার ৩০০ শিশু পুনর্বাসনের আওতায় রয়েছে। অপরাধপ্রবণ শিশু বা আইনের আওতায় আসা শিশুদের জন্য শিশু সেফ হোমের পাশাপাশি সরকারি শিশু (কিশোর-কিশোরী) উন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬ শতাধিক শিশুর পুনর্বাসনের কার্যক্রম তো রয়েছেই। এর বাইরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও চলছে পথশিশু পুনর্বাসনের নানা কার্যক্রম।

সংসদীয় কমিটি মনে করছে, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এখন সে পর্যায়ে নেই, যেখান থেকে ভিক্ষাবৃত্তি বা পথশিশু দৃশ্যমান হবে। উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখিতার অর্থনীতি প্রসারের ফলে শিশু-কিশোর বয়স থেকেই কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশে। শুধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে দারিদ্র্য নিরসন ও পুনর্বাসনের কাজে। এর মধ্যে ৩১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পাচ্ছে বয়স্কভাতা। বিধবাভাতা পাচ্ছে সাড়ে ১১ লাখ নারী। এর বাইরে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, হিজড়া পুনর্বাসন ভাতা, বেদে পুনর্বাসন ভাতা, চা-শ্রমিক উন্নয়ন ভাতা, দুস্থদের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনে আর্থিক সহায়তাসহ রয়েছে শিশু পুনর্বাসনের নানা কার্যক্রম ও ভাতা। এর পরও বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যেই নানা বাহানায় পথশিশু ও ভিক্ষুকদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। জানা যায়, এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিক্ষাবৃত্তির নেপথ্যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। ভিক্ষুকদের ওপর একটি জরিপও চালানো হয়েছে। ভিক্ষুকমুক্ত রাজপথ গড়তে মাঝেমধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ভিক্ষুক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর পরও ভিক্ষুক বা পথশিশুমুক্ত নয় জনপদ। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান করে তোলা এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। এজন্য রীতিমতো লড়তে হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে।

সর্বশেষ খবর