শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘সেই বৃদ্ধ দম্পতির দায়িত্ব নিলেন কাদের সিদ্দিকী’

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ভরণ-পোষণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া পাচু সরদার (৭৫) ও জহুরা বেগমের (৬৫) পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের চেয়ারম্যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। গতকাল কাদের সিদ্দিকী তার দলের নেতাদের নিয়ে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ব্যাসদী গ্রামে যান। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে কাছে পেয়ে বৃদ্ধ দম্পত্তি পাচু সরদার ও জহুরা বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় কাদের সিদ্দিকী তাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আজ থেকে আপনাদের সব দায়িত্ব আমি নিলাম, যতদিন বেঁছে থাকব, ততদিন আপনাদের সব দায়িত্ব আমার। আপনারা এখন আর একা নন, আপনাদের পাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান আছে।’ কাদের সিদ্দিকী ব্যাসদী গ্রামে এসেছেন এমন খবর পেয়ে মুহূর্তে কয়েকশ’ লোক তাকে দেখতে ছুটে আসেন। এ সময় অনেকেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। বঙ্গবীর ছোট-বড় সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। পাচু সরদার ও জহুরা বেগমকে অভয় দিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, এখন থেকে কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের জন্য সবই করব। তিনি এ সময় জহরা বেগমের হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, পাঞ্জাবি, মিষ্টি তুলে দেন। কাদের সিদ্দিকী ঘোষণা করেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন প্রতি মাসে আপনাদের তিন হাজার টাকা করে দিয়ে যাব’। বঙ্গবীরের এমন ঘোষণায় জহুরা বেগম-পাচু সরদার বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান সমাজে এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে। কোনোটি মিডিয়ায় আসছে, কোনোটি আসছে না। এমন ঘটনার প্রতিবাদ কিংবা বিচার হলে বাবা-মাকে আর অবহেলা করার সুযোগ কোনো সন্তান পাবে না। এ সময় তিনি খবরটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশের জন্য ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার দলের সাধারণ সম্পাদক হাবুিবর রহমান তালুকদার খোকা বীরপ্রতীক ও যুগ্মসম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকীসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ভরণ-পোষণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মা-বাবার কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া এবং ভরণ-পোষণ না দেওয়ার অভিযোগ এনে ছেলে সেলিম সিকদার মধুর বিরুদ্ধে মামলা করেন তার মা জহুরা বেগম। ১৭ এপ্রিল ফরিদপুরের ৪ নং আমলি আদালতে মামলাটি করা হয়। মায়ের অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক মো. সুমন হোসেন আগামী ২৩ মে ছেলে সেলিম সিকদার মধুকে (৩৫) আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি ২০১৩ সালের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনে ফরিদপুরে প্রথম মামলা। বর্তমানে পাচু সরদার ও জহুরা বেগম তার মেয়ের বাড়িতে থাকছেন।

‘ভরণ-পোষণ না পেয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা’—এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট গত মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকার শেষের পাতায় ছাপা হয়। সংবাদটি দেখে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ফরিদপুরের মধুখালীতে ছুটে আসেন এবং বৃদ্ধ দম্পত্তির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ খবর