বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

আত্রাই নদীতে বাংলাদেশের বাঁধ দেওয়া নিয়ে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ মমতার

কলকাতা প্রতিনিধি

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাঁধ দেওয়ার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে রাজ্যটির মুখ্য সচিব ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জেলাশাসককে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গতকাল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুরের নারায়ণপুর হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভা থেকে এ নির্দেশ দেন মমতা। কয়েক দিন আগেই আত্রাইর ওপর থেকে বাঁধ তুলে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মমতা। ২৫ এপ্রিল কোচবিহারের একটি জনসভা থেকে বাংলাদেশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বালুরঘাটে আত্রাই নদীতে সমস্যা হচ্ছে। ওখানে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের বন্ধু সরকারকে অনুরোধ করব, আত্রাই নদীর পানিকে বাঁধ দিয়ে আটকানো হচ্ছে, ওটা ছেড়ে দিন।’

যদিও সেদিন মমতাকে অতটা কঠিন হতে দেখা যায়নি। তবে মমতার সেই মন্তব্যের পর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়।

কিন্তু এদিনের মঞ্চ থেকে নিজের বক্তব্য শেষ করার কিছু আগে মমতা বলেন, ‘আমি আমার মুখ্য সচিব ও জেলাশাসককে একটা কথা বলে যাব যে আত্রাইর ওপর বাঁধ দিয়ে এখানকার পানি কিন্তু আটকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার পুরো রিপোর্ট চাই। বিষয়টি আমার কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখতে হবে। কারণ এই আত্রাইসহ অনেক নদী আছে, যেগুলো এই দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাণকেন্দ্র। এই প্রাণভোমরাকে মেরে ফেলা চলবে না।’

বালুরঘাটের লাইফলাইন বলে পরিচিত আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণের ফলে এ নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে পানির তীব্র অভাব। আর সে কারণেই মমতার এই কঠোর অবস্থান। তবে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এত দিন বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকলেও হঠাৎ করেই সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সঙ্গে পানির বণ্টন বা আত্রাই নদীর ওপর বাঁধ নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, বাংলাদেশকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মমতার ওপর যেভাবে চাপ ক্রমে বাড়ছে, তাতে এর পাল্টা হিসেবেই মমতাকে আত্রাই নদীর বাঁধ প্রসঙ্গটি তুলতে হচ্ছে।

এপ্রিলের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পর থেকেই তিস্তা, আত্রাই নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন মমতা। বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দিলে রাজ্যের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে এ প্রসঙ্গ তুলে ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরসঙ্গী হননি মমতা ব্যানার্জি। এরপর অনেক চেষ্টা করেও মমতাকে টলানো যায়নি। কিন্তু এপ্রিলে হাসিনার দিল্লি সফরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তবে তিস্তার পানির বদলে বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে বসেন মমতা। যদিও তাতে সাড়া দেয়নি প্রতিবেশী দেশটি। এমন এক পরিস্থিতিতে প্রায় প্রতিটি সভা থেকেই তিস্তা, আত্রাই নিয়ে সরব হচ্ছেন মমতা। পানির বণ্টন নিয়ে প্রতিবারই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর