রবিবার, ৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরিকল্পনা আছে বাস্তবায়ন নেই

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে মুক্ত আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতা দূর করাসহ সামগ্রিক নগর উন্নয়নে চট্টগ্রামে একজন সমন্বয়কারী দরকার। খাল দখল করে নির্মিত শহরের ১৩৯টি ভবন বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকেই ভাঙতে কোনো বাধা নেই। চট্টগ্রাম উন্নয়নে মহানগরের সংসদ সদস্যের সমন্বিত উদ্যোগ নেই অথচ তা জরুরি। চসিকের সঙ্গে চউকের সমন্বয় নেই, যা অপরিহার্য। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা আছে বাস্তবায়ন নেই। ‘জলাবদ্ধতা রোধে নাগরিক করণীয়’ শীর্ষক মুক্ত নাগরিক সংলাপে আলোচকরা এমনটি বলেন। মুক্তসংলাপে আলোচকরা নগর উন্নয়নে চট্টগ্রামে সমন্বয়কারী হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে মেয়রকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে আইনি ভিত্তি দিয়ে মেয়রকে দায়িত্ব প্রদানের দাবি ওঠে। মুক্তসংলাপটিতে এক টেবিলে বসে জলাবদ্ধতা সংকটের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছেন তিনজন ভিসিসহ শিক্ষাবিদ সাংবাদিক স্থপতি প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিক প্রতিনিধিরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম ওয়াসার নগর পরিকল্পনাবিদ, প্যানেলমেয়র, জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানসহ দায়িত্বশীলরা। গতকাল সকালে থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামে (টিআইসি) আয়োজক সংগঠন চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় কী নোট উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সাদার্ন ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ। আলোচনায় অংশ নেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর উপাচার্য প্রকৌশলী ড. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসটিসি) উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত প্রমুখ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম জাহাঙ্গীর, বিএমএ’র সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) প্রকৌশলী নাজমুল হক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রামের সদস্য সচিব নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক প্রদীপ খাস্তগীর প্রমুখ।

ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ড. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া নগরীর খাল-নালাগুলোর বর্তমান ধারণ ক্ষমতা, দিনের বেলায় শহরের লোকসংখ্যা নির্ধারণ ও তার প্রভাব চিহ্নিতকরণে একটি র‌্যাপিট সার্ভে করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা বহুমাত্রিক সমস্যা।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। সমাধানের পথ বাতলে দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৫ সালে প্রণীত নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মহাপরিকল্পনা গত বাইশ বছরেও হলো না কেন?

নগর পরিকল্পনাবিদ ও সাদার্ন ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেছেন, চট্টগ্রামে ১৯৬৫ সাল থেকে জলাবদ্ধতার সমস্যা ছিল। আমেরিকার মিসিগিনির একটি সংস্থার রিপোর্টে এই তথ্য দেওয়া আছে। ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে রাস্তায় ৩ ফুট পানি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়নের জন্য ওয়াসা ও সিডিএর একাধিক মহাপরিকল্পনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রাম শহর পানিতে ডুবে থাকলে দেখা গেছে খালের মুখে পাঁচশ গজের মধ্যে কোনো পানিপ্রবাহ নেই। প্রায় প্রতিটি মুখে ৫-১০টি অবৈধ স্থাপনা আছে। এই অবৈধ স্থাপনার তালিকা আমাদের কাছে আছে। কিন্তু স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই। আমরা প্রায় রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ি।

সর্বশেষ খবর