বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
সেমিনারে উদ্বেগ

প্রবীণরা বোঝা হয়ে উঠছেন কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রবীণরা অভিজ্ঞ মানুষ না হয়ে সমাজের বোঝা হয়ে উঠছেন কেন- এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজধানীতে আয়োজিত সেমিনারের বক্তারা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বাড়ছে প্রবীণ জনসংখ্যা। ২০৫০ সালে প্রতি পাঁচজনে একজন হবেন প্রবীণ। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে প্রবীণদের প্রতি বাড়ছে অবহেলা ও নির্যাতন। ভেঙে পড়ছে সামাজিক মূল্যবোধ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রবীণদের মর্যাদা ও সেবা দেওয়ার মানসিকতা।

বক্তারা বলেন, এ ধারা রুখতে হলে নিজে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং জাতিকে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখাতে হবে। কোনোভাবেই প্রবীণদের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব ও হেলপ এইজ ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এ সেমিনারের আয়োজন করে। ‘দুর্যোগের সময়ে প্রবীণদের সহায়তায় জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সেমিনার ও কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেলপ এইজ ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাবেয়া সুলতানা। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এস এম আতিকুর রহমান, প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশের খবর-এর সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভুইয়া, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী, প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য মইনুল আলম, নারী অধিকার কর্মী স্বপ্না রেজা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

অনুষ্ঠানে ঢাবি অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন ১ কোটি ৪০ লাখ প্রবীণ আছেন। ২০৫০ সালে তা ৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এরমধ্যে অতি প্রবীণ হবেন ৮০ ভাগ। কিন্তু  সন্তান ও পরিবার যদি বয়োবৃদ্ধ বাবা-মার দায়িত্ব না নেন- এই প্রবীণদের দেখবে কে? তাদের খাওয়াবে কে? আশ্রয় দেবে কে? চিকিৎসাসেবা দেবে কে? তিনি বলেন, দেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২ লাখ নিবন্ধিত এনজিও থাকলেও প্রবীণদের নিয়ে কাজ করা এনজিওর সংখ্যা মাত্র ৩-৪টি। এক্ষেত্রে সেবা দেওয়ার কেউ নেই। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সচেতনতা নেই।’ সোহরাব হাসান বলেন, ‘প্রবীণদের মধ্যে এক ধরনের অসহায়ত্ব কাজ করছে। তারা স্বজন-সন্তানদের কাছে অবাঞ্ছিত হয়ে যাচ্ছেন। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শুধু ভাতা দিয়ে প্রবীণদের আশ্বস্ত করতে পারব না।’ ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে হবে। প্রবীণদের মর্যাদা রক্ষায় পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।’ তিনি ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রবীণ সাংবাদিকদের সম্মাননা দেওয়ার ঘোষণা দেন। স্বপ্না রেজা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখাতে হবে।’ শফিকুর রহমান বলেন, ‘সুসন্তানের কাছে কোনো বাবা-মা বৃদ্ধ হন না। পরিবার থেকে সুশিক্ষা পেলে প্রবীণদের ভয়ের কিছু নেই।’ মূল প্রবন্ধে রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘২০৫০ সালে আমাদের দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন নাগরিক হবেন প্রবীণ। কিন্তু সমাজে এখন প্রবীণদের অভিজ্ঞ মানুষ হিসেবে দেখা হয় না, বোঝা হিসেবে দেখা হয়। প্রবীণদের প্রতি পারিবারিক ও সামাজিক এই বৈষম্য রোধে হেলপ এইজ ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বের ৭৪টি দেশে কাজ করছে। যার মূল কথা, সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে প্রবীণদের মর্যাদা দিতে হবে। হাসপাতালসহ সর্বত্র সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাদের প্রতি বৈষম্য দেখানো যাবে না।’

সর্বশেষ খবর