সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
দুর্নীতি অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ

তবুও থেমে নেই নিয়োগ প্রক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজ সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সে নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রতিনিধি চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে কলেজটির পক্ষ থেকে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক বরাবর আসা একটি অভিযোগের পর নিয়োগের সব প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর কলেজটিতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ কলেজ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, মহাপরিচালকের প্রতিনিধি এবং কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ কমিটির উপস্থিতিতে গত ১১ জুলাই ২০১৬ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

কলেজ সভাপতির পছন্দের দুজন প্রার্থী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে না পারায় ফল প্রকাশ স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে কলেজের গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোরপূর্বক রেজুলেশন বইয়ে স্বাক্ষর করিয়ে অনৈতিকভাবে পরীক্ষাটি বাতিল করে। বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনের বিনিময়ে এ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে বলে অধিকাংশ শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যরা মনে করেন। কলেজের সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের যোগসাজশে গত ৬ জুলাই পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আবেদনপত্র বাছাই, সাক্ষাৎকার বোর্ড গঠন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভা আহ্বান করে। সভায় অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও অর্থবাণিজ্যের পূর্বাভাস পেয়ে পরিচালনা পরিষদের দুজন সদস্য মো. মাহবুবুল আলম ও রুনা লায়লা নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিপত্র জমা দেন। পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই কলেজ সভাপতি অধ্যক্ষ প্রার্থী মো. শওকত আকবর ও উপাধ্যক্ষ প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কলেজ গভর্নিং বডিকে রেজুলেশন বইতে স্বাক্ষরের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ কাজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে সহযোগিতা করেন অধ্যক্ষ প্রার্থী শওকত আকবর নিজেই। অনিয়ম করে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে পদত্যাগ করা কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য মাহবুবুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তার পদত্যাগপত্র কলেজ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি বলে জানান। পরে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে এড়িয়ে যান। টিআর সদস্য রুনা লায়লার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবু সঞ্জীত কুমার দাস জানান, পূর্বের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ফল প্রকাশ করা হয়নি। কী কারণে প্রকাশ করা হয়নি তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার আয়োজন হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।

কলেজের অভিভাবক সদস্য ফারুক হোসেন জানান, পূর্বে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষাটি সম্পূর্ণ বৈধ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মনীতি মেনেই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পছন্দের লোক পরীক্ষায় ভালো না করায় পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়। এখন পুনরায় তার পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার পাঁয়তারা করছেন। আমরা গভর্নিং বডির অধিকাংশ সদস্য এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে। আমরা চাই পূর্বে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করবে। কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধ ঘুষবাণিজ্যের লেনদেন নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ গভর্নিং বডি মেনে নেবে না।

গভর্নিং বডির সিনিয়র অভিভাবক সদস্য বাবু বিঢু ভূষণ দত্ত জানান, কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি গভর্নিং কমিটিতে আছি। এ ধরনের অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারিতা আমি কখনই দেখিনি। আমরা অসহায়। এর প্রতিকার চাই। পূর্বে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বৈধ ও নিয়মনীতি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ফলাফল সিলগালা করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছিল আগত নিয়োগ কমিটির প্রতিনিধিরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা প্রকাশ করা হয়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, কলেজটির পক্ষ থেকে নিয়োগের জন্য এক্সপার্ট চাওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি এ ব্যাপারে ফোনও করেছিলেন। তবে একজন প্রার্থীর কাছে নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে এসব অনিয়মের সত্যতা জানতে কলেজের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে মতামত চাইব। তারপর এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর