সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
কুষ্টিয়ায় অপহরণের পর হত্যা

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বলি কলেজছাত্র সাগর সাহা

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরোধের কারণেই প্রাণ হারাতে হলো সদর উপজেলা শিবপুর গ্রামের কলেজছাত্র সাগর সাহাকে। বুধবার অপহরণের পর তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত শৌচাগার থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

গতকাল শিবপুর গ্রাম ঘুরে জানা যায়, গ্রামে প্রায় ২০০ হিন্দু পরিবারের বসবাস। হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মো. ইন্তাজ তাদের দেখভাল করেন। ইন্তাজ নিহত সাগরের বাবা প্রদীপ সাহার বন্ধু। ইন্তাজ শিবপুর গ্রামে ১৪ বছর ইউপি সদস্য ছিলেন। তার প্রতিপক্ষ ছিলেন জামায়াত কর্মী সিদ্দিকুর রহমান। সিদ্দিকুর ইউপি সদস্য থাকাকালীন গত বছর মারা যান। উপনির্বাচনে সিদ্দিকুরের স্ত্রী জেসমিন আরা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জেসমিনকে সমর্থন দেন হরিনারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন। মহিউদ্দীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে সখ্য থাকায় নির্বাচনে ইন্তাজের পক্ষে কাজ করেন প্রদীপ সাহা। এনিয়ে সিদ্দিকুরের ভাতিজা এনামুলসহ তাদের পরিবারের সঙ্গে প্রদীপের বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক ইউপি সদস্য ইন্তাজ বলেন, এনামুল ও জেসমিন জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা চেয়ারম্যান মহিউদ্দীনের ছত্রছায়ায় থাকে। এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর অত্যাচার করত। হিন্দু সমাজপতি হৃদয় সাহা বলেন, মহিউদ্দীনের সঙ্গে এনামুলরা যোগ দিয়ে আজ সাগরের মতো নিরীহ ছেলেকে মেরে ফেলল। তাদের অত্যাচারে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন রাত জেগে এলাকায় পাহারা দিচ্ছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের ভিতর ঢুকে আমাদের এলাকা ছাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাগরের বাবা প্রদীপ সাহা বলেন, আমার কোনো শত্রু নেই। কেন আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হলো। আমার একটাই অপরাধ আমি ইন্তাজের পক্ষ নিছিলাম। শনিবার রাতে লাশ উদ্ধারের পর শিবপুর গ্রামের বাসিন্দারা এনামুলের বাড়িসহ তার আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পুলিশ এনামুলকে আটক করেছে।

এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সকাল দশটা থেকে বেলা এগারটা পর্যন্ত কলেজের সামনে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে সাগরের সহপাঠীরা। বেলা এগারটায় শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সভা করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি সেখানে যান। তিনি প্রতিবাদ সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের কথা শোনেন। সমাবেশে মিন্টু সাহা ঘোষণা দেন সাগর হত্যার প্রতিবাদে আসন্ন দুর্গাপূজা শিবপুর গ্রামে করা হবে না। মিন্টু সাহা বলেন, চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন নব্য আওয়ামী লীগ এনামুলকে আশ্রয় দিয়ে তাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে।

 আওয়ামী লীগ নেতাদের পৃষ্ঠাপোষকতায় এনামুলসহ আরও কয়েকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাগরকে হত্যা করেছে। সাগরকে উদ্ধারে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সাগরকে যারা হত্যা করেছে তারা পেশাদার খুনি। তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধীরা রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান বলেন, সাগর হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আপনারা খুব দ্রুত দেখতে পাবেন। হরিনারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন বলেন, এনামুলসহ তার পরিবারের সবাই জামায়াতের রাজনীতি করত। কয়েক বছর আগে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। এখন তারা খুনের রাজনীতি করে ফায়দা হাসিল করছে। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাগর হত্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের আরেকটি পক্ষ কলকাঠি নাড়ছে। প্রসঙ্গত, বুধবার স্থানীয় খাতের আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র প্রদীপ সাহা বাইসাইকেল নিয়ে হারিনারায়ণপুর বাজারে বাজার করতে এসে অপহরণের শিকার হয়। অপহরণকারী সাগরের পরিবারের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ এবং পরে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

সর্বশেষ খবর