মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড

উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই

সাখাওয়াত কাওসার

জাতিসংঘ নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত দেশগুলো থেকে জলবায়ু খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অর্থ সহায়তার কথা থাকলেও তারা এর পরিমাণ দিন দিন কমিয়ে দিচ্ছে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ খাতের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আট বছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা থেকে ২০ কোটি ডলারের মতো সহায়তা পেয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ১৩ কোটি ডলার পাওয়া গেছে বিসিসিটিএফ থেকে। ২ কোটি ডলার পাওয়া গেছে এলডিসিএফ থেকে। জিসিএফ থেকে পাওয়া গেছে ৪ কোটি ডলার। অথচ প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক বেশি।

সূত্র আরও বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার শীর্ষে। মারাত্মক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে। ভয়াবহ মাত্রার খরা এবং অসময়ে বন্যার মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে। এই খাতে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে আগাম ব্যবস্থা না নিলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়টিকে সরকার শুরু থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ উন্নত দেশগুলোকে বার বার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অর্থ, কারিগরি ও প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয় উন্নত দেশগুলো। গঠন করা হয় জলবায়ু মোকাবিলা তহবিল। কোটি কোটি ডলারের অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও শিল্পোন্নত দেশগুলো এ তহবিলে অর্থায়ন করছে না। জলবায়ু ঝুঁকির শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ এ তহবিলের বড় দাবিদার হলেও বিগত বছরগুলোতে তেমন কোনো অর্থ জোটেনি।

এ বিষয়ে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে টাকা না পাওয়ার কারণেই অভ্যন্তরীণ বাজেটের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। এই পথে হাঁটা ঠিক নয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে বাইরের সহযোগিতা পেতে                         হলে জলবায়ুসংক্রান্ত প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ অর্থ দেবে না- যদি গতানুগতিক প্রকল্প নেওয়া হয়। টাকা পাওয়া সহজ হবে না যদি প্রকল্পের কোনো গুরুত্ব না থাকে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

সুতরাং এখনই দীর্ঘমেয়াদি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর সভাপতি আবু নাসের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে যে ক্ষতি হবে তা আমরা এরই মধ্যে অনুভব করতে পারছি। যদিও বর্তমানে এর পরিমাণটা অতি অল্প। যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে খুব শিগগিরই আমাদের অনেক কিছুই দেখতে হবে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রচুর উদ্যোগ নিয়েছে। বলা যায় এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশের উদ্যোগ এখন সবার কাছে অনুকরণীয় ও প্রশংসিত। এত কাজ হওয়ার পরও তা যথেষ্ট নয়, কারণ সমস্যা অনেক বড় ও সুদূরপ্রসারী। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সরকার, এনজিও, গবেষক, বিজ্ঞানী সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে উন্নত বিশ্বের কাছে জোর দাবি অব্যাহত রাখা উচিত। না হলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে খোদ জিডিপিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর