বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির ভূমিকা কী?

প্রতিদিন ডেস্ক


রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির ভূমিকা কী?

তাকে অনেকেই বর্ণনা করতেন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। তিনি যখন দীর্ঘসময় গৃহবন্দী ছিলেন, তখন তার মুক্তির জন্য অনেকেই সরব হয়েছিলেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সম্মানীয় এবং পূজনীয় একজন ব্যক্তিত্ব। অনেকেই ভেবেছিলেন, সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে তার দল ক্ষমতায় এলে দেশের পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই উল্টোদিকে মোড় নেবে সেটা অনেকে ভাবতেই পারেননি। যার কথা এখানে বলা হচ্ছে, তিনি হলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে অং সান সু চি ছিলেন একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। সু চি-কে তারা এমন একটি আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন, যেখানে খুব কম মানুষ স্থান পায়। কিন্তু অং সান সু চির সমালোচনা এবং নিন্দায় এখন সরব অনেকে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের পর হাজার-হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

জাতিসংঘের হিসেবে গত আট মাসে প্রায় এক লাখ পঁচাত্তর হাজার রোহিঙ্গা নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে গত দশ দিনে এসেছেন ৯০ হাজার। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন অং সান সু চি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে আছেন তিনি। তবে ঘরের চাপ এক ধরনের এবং বাইরের চাপ অন্য ধরনের। গত একমাস যাবত মিয়ানমারে অবস্থান করছেন ভারতের সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক। প্রায়ই তিনি মিয়ানমারে যাতায়াত করেন। সেখানকার রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা বলেছেন ভৌমিক।

তিনি বলছিলেন, এ রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চি এবং তার দল দুই তরফ থেকে সমস্যায় পড়েছে। এদিকে পশ্চিমা দুনিয়া, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন... সবাই অং সান সু চি-কে লক্ষ্য করে সমালোচনায় মুখর হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের ভিতরে রোহিঙ্গাবিরোধী তীব্র মনোভাব আছে বলে উল্লেখ করেন সুবীর ভৌমিক। তারা মনে করেন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের’ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে রাখাইনরা। তাদের একটা চাপ রয়েছে। কোনোভাবেই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাবার্তা আলোচনা বা এমন কিছু করা যাবে না যাতে রোহিঙ্গাদের সুবিধা হয়। সেখানে স্বার্থ দেখতে হলে রাখাইনদের স্বার্থ দেখতে হবে, বলছিলেন সুবীর ভৌমিক। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মিয়ানমারবিষয়ক দূত ইয়াংহি লি আহ্বান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে অং সান সু চি যেন সরব হয়। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না।

রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সু চির সরব না হওয়ার কারণ কী? এটা কী তার রাজনৈতিক দুর্বলতা নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক মনে করেন, এটা সু চির রাজনৈতিক দুর্বলতা। বর্তমান সরকারে অং সান সু চির অবস্থান পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং স্টেট কাউন্সিলর। তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি সরকার গঠন করলেও তার হাতে কর্তৃত্ব কম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সীমান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব সেনাবাহিনীর হাতে। ভৌমিক বলেন, এমন অবস্থায় সু চির পক্ষে চাইলেও কিছু করা সম্ভব নয়। সেনাবাহিনী কন্সটিটিউশন (সংবিধান) এমনভাবে করেছিল যে পার্লামেন্টে এক-চতুর্থাংশ তাদের সদস্য থাকবে। এটা মেনেই অং সান সু চিকে নির্বাচন করতে হয়েছে এবং এটা পরিবর্তন করার কোনো সম্ভাবনা নেই। ... ‘অং সান সু চির টিকে থাকতে গেলে এবং নতুন কোনো সেনাবাহিনীর তত্পরতা যাতে না হয় তাকে গদিচ্যুত করার, তা হলে তার পক্ষে মনে হচ্ছে খুব বেশি বলা সম্ভব না’, বলছিলেন ভৌমিক। বিষয়গুলো নিয়ে অং সান সু চির দল এনএলডির মধ্যে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ আছে বলে লক্ষ্য করছেন মি. ভৌমিক। দলের একটি অংশ মনে করে, অং সান সু চির উচিত সেনাবাহিনীর কাছে বিষয়গুলো জোরালোভাবে তুলে ধরা।

কিন্তু সু চি সে সাহস এখনো সঞ্চয় করতে পারেননি বলে মনে করছেন মি. ভৌমিক। রাখাইন রাজ্যের ভাগ্য নিয়ন্তা সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী তাদের মতো করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে। এখানে অং সান সু চির কথা কতটা গুরুত্ব পাবে সেটি নিয়ে সংশয় আছে সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের।

তবে সু চির দল এনএলডি মনে করে, মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাত নিরসনে সেনাবাহিনী অতীতেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।

নির্বাচনের আগে সু চির প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি গণতন্ত্রের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করবেন। কিন্তু সু চির সে প্রতিশ্রুতি এখন সুদূর পরাহত। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর একটি অংশ মনে করে, মিয়ানমারে নির্বাচন হলেও রাখাইন রাজ্যে তাদের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। এ অসমাপ্ত কাজটি হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের সে অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা। বিবিসি

সর্বশেষ খবর