মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
দাম বাড়ানোর কারসাজি ধরল টাস্কফোর্স

কুষ্টিয়ার ৭০ চালকল মালিকের কাছে মজুদ দশ লাখ টন ধান

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

দেশে চালের দাম দফায় দফায় বাড়ার পেছনে চালকল মালিকদের কারসাজি ধরে ফেলেছে টাস্কফোর্স। গতকাল মিনিকেট চালের সর্ববৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে অভিযার চালাতে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার ৭০ জন বড় চালকল মালিকের মিলে অনেক আগে কেনা প্রায় ১০ লাখ টন ধান মজুদ রয়েছে। টাস্কফোর্স এ সময় চালের দাম বাড়াতে কারসাজি করায় কল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। দেশের মিনিকেট চালের প্রধান জোগান যায় খাজানগর মোকাম থেকে। জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানেই এই মোকামে মিনিকেট চালের দাম বাড়ানো হয়েছে কেজি প্রতি ৫ টাকা। চালকল মালিকদের দাবি, ‘বর্তমানে বাজার থেকে বেশি দামে’ ধান কেনার কারণেই তারা চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বর্তমানে যে ধান থেকে চাল উৎপাদন করা হচ্ছে, সেই ধান ৩-৪ মাস আগে কম দামে বাজার থেকে সংগ্রহ করে গুদামজাত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ৭০ জন বড় চালকল মালিকের মিলে প্রায় ১০ লাখ টন ধান মজুদ রয়েছে। এ ধান কয়েকমাস আগে বাজার থেকে কেনা। এর মধ্যে চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের গুদামেই ২ লাখ টন ধান মজুদ রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, খাজানগর ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু গুদামে আবদুর রশিদ ধান মজুদ করে রেখেছেন।

গত কোরবানির ঈদের আগে মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি ৫৪ টাকা থাকলেও ঈদের পর ফের চালের দাম কেজিতে ২.৪০ টাকা বাড়িয়ে ৫৬.৪০ টাকা করেছেন চালকল মালিকরা। এ অবস্থায় গতকাল টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে খাজানগর চালের মোকামে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের মিলের ১৩টি গুদামে গিয়ে টাস্কফোর্স দেখতে পায়— এসব গুদাম দীর্ঘদিন খোলা হয়নি। যার ফলে তালায় জং ধরে গেছে। এরকম জং ধরা একটি গোডাউনের তালা হাঁতুড়ি দিয়ে ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিস্মিত হন অভিযানকারী দলের সদস্যরা। তারা ধানের বস্তার চেহারা দেখে জানান, এই ধান ৪ থেকে ৫ মাস বা তারও বেশি আগে সেই সময়ের বাজার দরে কেনা। ওই চালকলের এক কর্মকর্তা টাস্কফোর্সকে জানান, প্রতিদিন তাদের মিলে ৫০০ টন চাল উৎপাদন হয়। এ সময় টাস্কফোর্সের প্রধান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ওই চালকলের চাল বিক্রির রেজিস্টার চেক করে দেখেন, গত মাসে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করা হয়েছে ৫১.৫০ টাকা দরে। গতকাল সেই চাল বিক্রি করা হয়েছে ৫৬.৪০ টাকা দরে। এসব যাচাই বাছাই করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম জানান, চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশীদ বর্তমানে প্রতিদিন চাল বিক্রি করে অতিরিক্ত ২৫ লাখ টাকা করে লাভ করছেন। তিনি জানান, এখান থেকেই দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সাইফুল ইসলাম আরও জানান, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কিছু মিল মালিক কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। সরু ও মিনিকেট চালের বড় জোগান কুষ্টিয়া থেকে যায়, তারাই ধান-চাল মজুদ রেখে সিন্ডিকেট করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

এ সময় ভ্রাম্যমাণ অভিযানের টাস্কফোর্স বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।

সর্বশেষ খবর