মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
নিউইয়র্কে ড. নজরুল

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের বিচার হওয়া চাই

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক

জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রকৃত বিচার এখনো হয়নি। যা হয়েছে, তাকে বলা যায় শেখ লুত্ফর রহমানের পুত্র ব্যক্তি শেখ মুজিবের বিচার। কিন্তু জাতীয় নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো হয়নি। এজন্য বৃহৎ আকারে তদন্ত হওয়া দরকার। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নৃশংসতার নেপথ্যে কারা ছিল, কারা ষড়যন্ত্রে মদদ দিয়েছে, তাদের সবার বিচার হওয়া দরকার। তাহলেই এমন ভয়ঙ্কর বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।’ ড. নজরুল শনিবার নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে জুইশ সেন্টার মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা’য় এই অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর আলোকে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণামূলক বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ড. নজরুলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকারীদের মধ্যে ছিলেন পরিষদের সভাপতি ড. নূরুন্নবী, সম্পাদক শিতাংশু গুহ। তাদের সঙ্গে ছিলেন লেখক আনিসুল হক। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের পুত্র ফাহিম রেজা নূর এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শুভ রায়।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ পাঁচ বছর ধরে এই স্মারক বক্তৃতা আয়োজন করে চলেছে। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়ার পর ড. নজরুল যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করেন। স্মারক বক্তৃতার আগে তিনি শ্রোতাদের জানান, তিনি ১৯৮০ সালে মস্কো থেকে বাংলাদেশে ফিরেই ‘জাসদ রাজনীতির নিকট বিশ্লেষণ’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে জাসদের অবস্থান নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। সেসব নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন এই বইতে। অতিসম্প্রতি তার আরেকটি বই বেরিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সুশাসন নিয়ে। এর আগে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও বাংলাদেশের গ্রাম’ নামে তিনি আরেকটি গবেষণামূলক বই লিখেছেন। শনিবারের বক্তৃতায় ড. নজরুল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গ্রাম নিয়েই মূলত আলোকপাত করেছেন।

স্মারক বক্তৃতায় ড. নজরুল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলেই সত্যিকার অর্থে তার প্রতি সম্মান জানানো সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়লে বাঙালি জাতির অবিস্মরণীয় এই নেতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা সম্ভব।

ড. নজরুল বলেন, ‘বিশ্বের অনেক বিখ্যাত মানুষই নিজের কাজে আর্থিক উৎস প্রকাশ করেননি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার ব্যতিক্রম। প্রতিটি আন্দোলনে কে কীভাবে সহায়তা দিয়েছেন, তা তিনি প্রকাশ করেছেন। তার সহকর্মীরাও যাতে তার মতোই স্বচ্ছ থাকেন, সেজন্য তিনি এমন সরলোক্তি করে গেছেন।’

ড. নজরুল বলেন, ‘১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের যে ডাক দেন তার লক্ষ্য ছিল প্রতিটি গ্রামে বাধ্যতামূলক সমবায় প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তাকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় বিপ্লব আর অগ্রসর হতে পারেনি। এত দিনে বিশ্ব পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। এসব পরিবর্তনের পর আজও কি বঙ্গবন্ধুর সমবায়ী গ্রামের স্বপ্নের কোনো প্রাসঙ্গিকতা বা উপযোগিতা আছে! যদি থাকে তাহলে তা কী? কীভাবে গ্রামবিষয়ক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে যুগোপযোগী করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে?’

ড. নজরুল উল্লেখ করেন, ‘সমাজতন্ত্রের প্রতি বঙ্গবন্ধু তার নিজস্ব বিশ্বাস ও সে সময়কার সমাজতন্ত্রের আন্তর্জাতিক মডেল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। যদিও বঙ্গবন্ধুর সমবায় পুরোপুরি সমাজতন্ত্রের সমবায় ছিল না। সমাজতন্ত্রের সমবায়ে সাধারণত জমির ওপর ব্যক্তিমালিকানা থাকত না, ফলে নিট উৎপাদনের প্রায় পুরোটাই শ্রমের ভিত্তিতে বিতরণ হতো। বিপরীতে, বঙ্গবন্ধুর সমবায়ে জমির ওপর ব্যক্তিমালিকানা অক্ষুণ্ন ছিল। ফসলের তিন ভাগ হওয়ার কথা ছিল। এক ভাগ জমির মালিকানা ভিত্তিতে, এক ভাগ শ্রমের ভিত্তিতে এবং আরেক ভাগ “গ্রাম তহবিল”-এর জন্য। এ তহবিল দ্বারা গ্রামের কল্যাণমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা।’

সর্বশেষ খবর