বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

তাজউদ্দীন মেডিকেলে সংঘর্ষ, আহত ৯

গাজীপুর প্রতিনিধি

শিক্ষার্থী ও হাসপাতাল কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গতকাল সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে মেডিকেল কলেজের ভর্তি ও পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। গতকাল দুপুরে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আসাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃত্বে সোমবারের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও হাসপাতাল কর্মচারীদের মধ্যে গতকাল সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে দুপুরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ শিক্ষার্থী ও ৪ কর্মচারী আহত হয়। এ সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, সোমবার দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভাঙচুর ও কর্মরত আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ওপর অতর্কিতে হামলার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে কর্মচারীরা গতকাল সকাল থেকে অবস্থান শুরু করে। শিক্ষার্থীরাও আউটসোর্সিং কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার ও অনিয়মের বিচারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করে। জানতে পেরে হাসপাতাল পরিচালক ও সহকারী পরিচালক, আউটসোর্সিং ঠিকাদার ও কর্মচারীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের কাজে ফিরিয়ে আনেন।

অপরদিকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৈঠক করেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিতে ব্যর্থ হন। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ভবনের দ্বিতীয় তলায় জড়ো হয়ে আউটসোর্সিং কর্মচারী ও হাসপাতালের পরিচালকদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। আউটসোর্সিং কর্মচারীরাও হাসপাতালের নিচ তলায় জড়ো হয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অধ্যক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক আহ্বান করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আউটসোর্সিং ঠিকাদার যুবলীগ নেতা আমজাদ হোসেন পলাশ, আউটসোর্সিং কর্মচারী রাজিব, নজিব, ও রাকিব এবং ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ মিরাজ ও মোহাম্মদ উল্লাহ সজল, তৃতীয় বর্ষের সীমান্ত সালেহীন, দ্বিতীয় বর্ষের কামাল আহমেদ ও মেহেরীন সেলিম অর্পা আহত হয়। খবর পেয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে হাসপাতাল পরিচালক ও অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যক্ষ কলেজের সব ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার দুপুরে পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম সাদা কাগজে চিকিৎসকের সাক্ষর ছাড়া স্লিপ নিয়ে তার মায়ের এক্স-রে করাতে গেলে টেকনিশিয়ান অপারগতা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা গিয়ে এক্স-রে কক্ষ ও টিকিট কাউন্টারে ভাঙচুর করে। হামলায় কর্মচারী শাহীন ও কবির আহত করে। রাতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল আলম সরকার বাদী হয়ে আউটসোর্সিং ঠিকাদার পলাশসহ কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এ খবর জানাজানি হলে গতকাল আউটসোর্সিং কর্মচারী উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন জানায়, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের দাপট ও দৌরাত্ম্যে রোগী ও সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এছাড়া ঠিকাদার পলাশ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় তারা থানায় জিডি করেন। এসবের প্রতিবাদে তারা ক্লাস বর্জন করে বিচার দাবি করেন। একপর্যায়ে কলেজের অফিসের সামনে এসে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। ঠিকাদার পলাশ হুমকি দেওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেন। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আসাদ হোসেন জানান, কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সৈয়দ মো. হাবিবউল্লাহ জানান, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর