বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর

আজ ভয়াবহ সিডর দিবস

প্রতিদিন ডেস্ক

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে খুলনার দাকোপের কালাবগি ও সুতারখালী ইউনিয়ন, কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেতকাশী, সাতক্ষীরার গাবুরা ও পটুয়াখালী সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালী গ্রাম। সরকারি মতে, সিডরের আঘাতে খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালীসহ উপকূলের ২০ লাখ একর জমির ফসল নষ্ট হয়। এতে প্রাণ হারায় কয়েক হাজার মানুষ। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অগণিত মানুষ। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ দীর্ঘ ১০ বছর পরও ঘূর্ণিঝড় সিডরের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন— খুলনা : প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে খুলনার দাকোপের কালাবগি ও সুতারখালী ইউনিয়ন, কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেতকাশী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে প্রাণ হারায় ৩ হাজার ৩০০ মানুষ। বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ ১০ বছর পরও ঘূর্ণিঝড় সিডরের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। আর খুলনার দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার বা আশ্রয় কেন্দ্র। যেসব এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র আছে, সেগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। খুলনার ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, জেলা আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৫৭টি। এর মধ্যে কয়রায় ৪৮টি, পাইকগাছায় ২৭টি, দাকোপে ৫৭টি, বটিয়াঘাটায় ১৭টি ও ডুমুরিয়ায় ৮টি। তবে জেলার রূপসা, দীঘলিয়া, তেরখাদা ও ফুলতলা উপজেলায় কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নেই। জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এসব আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করলেও অসংখ্য মানুষ জায়গা না পেয়ে ফিরে যায়। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তারা খুঁজতে থাকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ উঁচু ভবন। কয়রার উত্তর বেতকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম জানান, দুর্যোগপূর্ণ কয়রা এলাকায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস করে। কিন্তু দুর্যোগের সময় এখানে ৪৮টি কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারে মাত্র ২০ হাজার মানুষ। ফলে অসংখ্য মানুষ থেকে যায় দুর্যোগ ও শঙ্কার মধ্যে। অভিযোগ রয়েছে, কয়রার অনেক আশ্রয় কেন্দ্র জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগই নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এ ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. আমিন-উল আহসান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বরগুনা : প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১০ বছর পরও স্বজন ও সম্পদ হারানোর ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে বরগুনার উপকূলের মানুষ। সিডরের ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে প্রতিটি দিন কাটছে তাদের। এই পরিবারগুলোর প্রাপ্তি ১০ বছরে নিহতদের গণকবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভা। বরগুনায় সরকারি হিসাবে সিডরে ১ হাজার ৩৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ২ সহস্রাধিক।

৩ শতাধিক মানুষ আজও নিখোঁজ। সিডরে সরকারি হিসাবে ২ লাখ ১৭ হাজার ২১৯ পরিবারের ক্ষতির তালিকা করা হলেও বেসরকারি হিসাবে প্রায় ৪ লাখ পরিবার ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে। সিডরে স্বামী হারিয়েছেন নূরী বেগম। বাড়ি বাড়ি ঘুরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। নিশানবাড়িয়া গ্রামের বুলবুলি বেগম স্বামী-সন্তান-শ্বশুরসহ পরিবারের নয় সদস্যকে হারিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে। বেঁচে থাকা একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পানির স্রোতে তার চোখের সামনে ভেসে যায় স্বজনরা। ১০ বছরেও বসতঘর করতে পারেননি জাহানারা বেগম, হালিমা বেগমের মতো আরও অনেকেই। তারা চান স্থায়ী পুনর্বাসন।

আমতলী (বরগুনা) : বরগুনার আমতলী ও তালতলীতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, যা অপ্রতুল। বড় ধরনের দুর্যোগ দেখা দিলে মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে। এদিকে ৪৫ পোল্ডারে ৩ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিইএল। তারা এখনো বাঁধের ওই ৩ কিলোমিটার কাজ সংস্কার করতে পারেনি। উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ সাগর-সংলগ্ন নিদ্রা, সখিনা, আশার চর, জয়ালভাঙা ও ফকিরহাটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। এখানে এখনো কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিডর আঘাত হানার পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের যথাযথ সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ হয়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ আশ্রয় কেন্দ্র সিডরে কলাপাড়া উপজেলায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১ হাজার ৭৮ জন। এখনো নিখোঁজ আট জেলে। ঝড় ও ঝড়ের পরবর্তী সময়ে রোগ-বালাইয়ে মারা গেছে বহু গবাদিপশু। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৪৪০টি পরিবারকে পাকা ও আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে তেমন কোনো স্থাপনা বা ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর