নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর মিথ্যা অজুহাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ইনদিনে ১০ রোহিঙ্গাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, কবরের কাছে এনে এই রোহিঙ্গাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর তাদের কবর দেওয়া হয়। খবর : রয়টার্সের। বিশেষ অনুসন্ধানের বিবরণ দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের আলামত পেয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেনাবাহিনী গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ১০ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিলেও এর দায় গ্রামবাসীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছিল। তখন নিহতদের ‘বাঙালি জঙ্গি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার অনুসন্ধান চালিয়ে রয়টার্স নিশ্চিত হয়েছে, ওই ১০ রোহিঙ্গা ছিলেন সাধারণ গ্রামবাসী। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেছিলেন, গ্রামবাসী তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার পর হত্যা করে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুজনকে গ্রামবাসী হত্যা করলেও বাকি আটজনকে সেনাবাহিনীই হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৌদ্ধ গ্রামবাসীর কাছে পাওয়া ছবি, ওই কবর খননের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক এক বৌদ্ধ সেনা সদস্যের কাছ থেকে ঘটনার যাবতীয় প্রমাণ মিলেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, ১০ রোহিঙ্গা ‘২০০ সন্ত্রাসীর’ অংশ, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল। অন্যদিকে বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ইনদিনে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিদ্রোহীদের আক্রমণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। উল্টো সেনারাই কাছাকাছি একটি সমুদ্রসৈকতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ১০জনকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখের মধ্যে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা নিকটবর্তী সমুদ্রসৈকতে আশ্রয় নেয়। যাদের মধ্যে পরে হত্যাকাণ্ডের শিকার ১০ জনও ছিলেন।
হত্যার শিকার এ রোহিঙ্গাদের পাঁচজন ছিলেন জেলে ও মাছবিক্রেতা। বাকিদের মধ্যে দুজন দোকানি, দুজন ছাত্র এবং একজন ধর্ম শিক্ষক। রোহিঙ্গা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসলাম ধর্ম শিক্ষক আবদুল মালিক আশ্রয়স্থলের জন্য খাবার ও বাঁশ যোগাড়ে নিজের পল্লীতে গিয়েছিলেন। যখন তিনি সেখান থেকে সমুদ্রসৈকতে ফিরে আসছিলেন, তখন অন্তত সাতজন সেনা ও সশস্ত্র বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা তাকে ধাওয়া করে। এরপর সমুদ্রসৈকতে এসে এখান থেকে তারা ১০ রোহিঙ্গাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। রয়টার্সের হাতে আসা এক আলোকচিত্রে ওইদিন সন্ধ্যায় গ্রামের পথে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা ১০ রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে তাদের কবরস্থানের কাছাকাছি একটি সবজি ক্ষেতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে গ্রামবাসীরা জানান। সেখানেই ফের তাদের ছবি তোলা হয়। এদিকে যারা কবর খুঁড়েছিলেন তাদের একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক সোয়ে চায়ে বলেছেন, ‘ধরা পড়া ব্যক্তিদের ওপর প্রথম আঘাত হানতে সেনাদলের প্রধান মাউং নি-র সন্তানদের আমন্ত্রণ জানান। তার জ্যেষ্ঠ সন্তান ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ধর্ম শিক্ষক আবদুল মালিকের মাথা আলাদা করে ফেলে। দ্বিতীয় সন্তান আরেকজনের ঘাড়ে কোপ মারে।’ পরে রাখাইনের বয়স্ক এক নাগরিক রয়টার্সের প্রতিবেদককে হত্যাকাণ্ডের একটি ছবি সরবরাহ করেন।
ইনদিনে গণহত্যাকাণ্ডের বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে সরকারি মুখপাত্র জ হাতেয় বলেছেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আমরা অস্বীকার করছি না। কোনো অভিযোগই আমরা ফেলে দিচ্ছি না। যদি নির্যাতনের শক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রাথমিক প্রমাণ থাকে, তাহলে অবশ্যই সরকার এর তদন্ত করবে। যদি প্রমাণের সত্যতা পাওয়া যায় এবং সেখানে সহিংসতার প্রমাণ মেলে, এখনকার আইন অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’