বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভারতের বন্দর ব্যবহার করতে চান ব্যবসায়ীরা

প্রস্তাবে সায় দিলেন অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দরে অব্যাহত কনটেইনার জটের মুখে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি সচল রাখতে চান দেশের ব্যবসায়ীরা। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হলদিয়া ও প্যারা দ্বীপসহ কয়েকটি বন্দর ব্যবহারের এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। মঙ্গলবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ— ডিসিসিআই আয়োজিত ‘পুনঃনৌ যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ প্রস্তাব দেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধান অতিথি ও নৌ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খানের সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড—এসএপিএলের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসির রিজভী। সেমিনারে সমাপনী বক্তব্য দেন ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামরুল ইসলাম। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, ঢাকায় নিয়োজিত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুলেনারি, বাংলাদেশ নিটওয়ার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি— বিকেএমইএ সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন, মারসক বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি অপারেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম চৌধুরী, কুইহনি+নাগেল লিমিটেডের (বাংলাদেশ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরুণ পাটওয়ারী, পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার ট্রার্মিনাল—পিআইসিটির টার্মিনাল ম্যানেজার আহমেদুল করিম চৌধুরী এবং মারকর্স অ্যান্ড স্পেনারের (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) আবাসিক প্রধান স্বপ্না ভৌমিক। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ভারতের বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে সায় দিয়ে বলেন, আপনারা যদি সত্যি ভারতের বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করতেই চান, তাহলে সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে এখনই ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। এ সময় তিনি বন্দর ব্যবহারে কাস্টমসের সমস্যাসমূহ তুলে ধরে বলেন, বন্দরে কাস্টমসের নিচের স্তরে কিছু সমস্যা আছে। মূলত সেখানেই ধীরগতি হয়। এক্ষেত্রে কাস্টমস কর্মকর্তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলেও মত দেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, ভারতের বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ থাকলে রপ্তানি বাড়বে। কিন্তু দেশের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হবে। দেশের বন্দর সমূহের অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বেসরকারিখাতের বন্দরগুলোর জন্য একটি নীতিমালা দরকার। সরকার পানগাঁও ও পায়রা বন্দর করেছে। এসব বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। পানগাঁও বন্দরে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হলেও, ব্যবসায়ীরা তা ভোগ করতে পারেনি। মোংলা বন্দরের শুল্ক সুবিধাও নেয়নি। তার মতে, ঢাকায় একটি অফডক ও সমুদ্রে ভাসমান       বন্দর প্রয়োজন। যা মাত্র ৬ মাসে চালু  করা যাবে। সেমিনারে ঢাকায় নিয়োজিত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি কুলেনারি কিছুটা অবাক হয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশে এত নদী থাকার পরও কেন সড়ক পথে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। পানগাঁও এবং পায়রা বন্দর নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা নেই কেন? ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কার্গো আসার পর ১৫ থেকে ২১ দিন বসে থাকতে হয়। বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে খরচ কমাতে হবে। আমি নিজেও এক্ষেত্রে ভিকটিম।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড—এসএপিএলের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসির রিজভী বলেন, ভারতের সঙ্গে নৌ পথে ট্রান্সশিপমেন্ট আছে বাংলাদেশের। এই চুক্তির আওতায় ঢাকার কাছাকাছি থাকা পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানির জন্য কাস্টমসের অনুমোদনও আছে। এখন বাংলাদেশের পানগাঁও বন্দরসহ অন্য বন্দরগুলোকে নৌ প্রোটকল চুক্তির আওতায় স্বীকৃতি দেওয়া হলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট কমবে। কারণ, পানগাঁও ছাড়া অন্য বন্দরসমূহের স্বীকৃতি নেই ত্রি-দেশীয় ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য।

সর্বশেষ খবর