শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রী, মামলা

রোকনুজ্জামান পারভেজ, শরীয়তপুর

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার একটি গ্রামের এক কলেজছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জাজিরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক আশ্রাফুল ইসলাম ওরফে মিঠু মাদবরের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় ছাত্রীটির বাবা বাদী হয়ে জাজিরা থানায় মামলা করেছেন বুধবার। স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরার জয়নগর ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা মিঠু মাদবর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক। পাশের গ্রামের এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। প্রেমের ফাঁদে ফেলে দুই বছর আগে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তখন কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ওই ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ছাত্রীটিকে পুনরায় ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।

লোকলজ্জার ভয় ও সামাজিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে ছাত্রীটি গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। তাকে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। মিঠু মাদবর ঢাকায়ও ওই ছাত্রীকে বিরক্ত করতে থাকেন। এ কারণে ওই ছাত্রীর বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। লজ্জা-অপমানে ওই ছাত্রী কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

এদিকে মিঠুদের বাড়িতে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়। তবে মিঠুদের পুরান বাড়িতে তার দাদি ও কাকি বলেন, ষড়যন্ত্র করে মিঠুকে ফাঁসানো হয়েছে।

অন্যদিকে ওই ছাত্রীর পরিবার পাশের উপজেলায় তার বিয়ে ঠিক করে। গত বছর ২৫ নভেম্বর ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। বিয়ে শেষে ২৭ নভেম্বর তার স্বামী শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের নিয়ে তাদের বাড়ি বেড়াতে আসেন। তখন মিঠু ছাত্রীটির কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তার স্বামীর হাতে তুলে দেন। ওই ছবি ও ভিডিও পাওয়ার পর ওই ছাত্রীর স্বামী তাদের বাড়ি থেকে চলে যান। ওই ছাত্রীকে আর স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। বিষয়টি সমঝোতা করার জন্য ছাত্রীর পরিবার শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানায়।

১৫ ফেব্রুয়ারি ‘জয়নগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে মিঠু মাদবরের সঙ্গে ওই ছাত্রীর কিছু আপত্তিকর ছবি ও ৫৫ সেকেন্ডের একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫০-৬০টি ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে ওই ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।

জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের শরীয়তপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি মিঠু মাদবরের এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড আমার নজরে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা কমিটিকে তাকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছি। তারা তাকে বহিষ্কার করতে কালক্ষেপণ করায় ১৮ ফেব্রুয়ারি আমিই জেলা কমিটির পক্ষে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছি।’

মঙ্গলবার বিকালে মিঠু মাদবরের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, পাঁচ-ছয় দিন যাবৎ তিনি এলাকায় নেই। এর আগেও মিঠু ওই ইউনিয়নের আরও দুটি মেয়ের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছেন। ২০১৫ সালে এক ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় মামলা হয়। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ওই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, ‘মিঠু আমার ছবি কাট-পিস করে ফেসবুকে দিয়েছে। আমাদের সামাজিকভাবে ছোট করেছে। আমি এর বিচার চাই। লজ্জা-অপমানে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। আমার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।’

ওই ছাত্রীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি শিক্ষক মানুষ, এলাকার মানুষ আমাকে অনেক শ্রদ্ধা-সম্মান করেন। সবসময় মাথা উঁচু করে সমাজে চলতাম। ঘরে বসে মেয়েকে নিয়ে শুধুই কান্না করি।’

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, ‘এমন একটি খবর লোকমুখে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি বুধবার সন্ধ্যায়। মিঠুকে ধরার চেষ্টা চলছে।’

সর্বশেষ খবর