বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র পূর্ণতা পায় মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুজিবনগরে সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে পূর্ণতা পায়। স্বাধীনতা ঘোষণার পর রাষ্ট্রের মূল উপাদানের মধ্যে ভূমি, সার্বভৌমত্ব ও জনগণ সবই ছিল, কিন্তু বাকি ছিল শুধু সরকার। ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ গ্রহণের পর স্বাধীনের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ হয়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে থাকা সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায়।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম আয়োজিত ‘ইতিহাসের আলোকে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১’ শীর্ষক আলোচনা সভায় স্মৃতিচারণামূলক বক্তব্যে এসব বলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর (অব.) সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সহসভাপতি সাবেক আইজিপি নূরুল আলম, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, মহাসচিব হারুন হাবিব, মেজর ওসিউজ্জামান রেমি (অব.), আবু হাসেম ভূঁইয়া, শাহজাহান মৃধা, মেজর রেজাউল করিম (অব.), সাবেক সচিব ড. শওকত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ টি এম নজরুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটওয়ারী ও শহিদ মজিদকন্যা ফারজানা শাহনাজ মজিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সচিব আনোয়ারুল আলম।

কে এম সফিউল্লাহ বলেন, আমাদের দেশ আমাদের অর্জন। মুজিবনগর সরকারের অন্যতম সদস্য ছিলেন খন্দকার মোশতাক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করছিলেন। তার এই গতিবিধি মুজিবনগর সরকারের অন্যরা বুঝতে পারলে তাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখেন; যার ক্ষোভ তিনি ঝেড়েছিলেন ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট।

স্মৃতিচারণায় তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাতে যখন পাক হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় তখন খবর এলো অন্তত ৩০০ ছাত্রছাত্রী নিহত হয়েছেন। তত্ক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম, পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যায় না। ২৭ মার্চে অন্তত ১ হাজার সঙ্গী নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর হয়ে ময়মনসিংহে গেলাম। সেখান থেকে ১ এপ্রিল সিলেটে গেলাম। এর পরই আমরা সিলেটের তেলিয়াপাড়ায় এক বৈঠক করি। সেখানেই আমরা মাথার ওপর এক রাজনৈতিক ছাতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলি। এর পরই ১০ এপ্রিল সরকার গঠনের কথা জানাজানি হয়। প্রথমে আখাউড়ায় এ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, পরে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ১৭ এপ্রিল ছিল মুক্তিযুদ্ধের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতা। এর প্রয়োজনীয়তা আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানানো দরকার। এটি আমাদের দায়িত্ব। তাদের সামনে মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা উচিত। তবে মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলে নিজেদের মধ্যে থাকা সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায়। নির্দেশনা আসার একটি সুনির্দিষ্ট জায়গা তৈরি হয়ে যায়। আর জাতির জনক বলছেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।

হারুন হাবিব বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে আছে যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি, ’৭১-এ আছে অগ্নিঝরা মার্চ, আছে স্বাধীনতা ঘোষণার ২৬ মার্চ, সেই সঙ্গে আছে ১০ এপ্রিল। আর সেই সরকারের শপথ গ্রহণের দিন এই ১৭ এপ্রিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর