বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাবির ১২৯ শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদভুক্ত ১৬টি বিভাগের ১২৯ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে ‘ডিনস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ ছাড়া সেরা গবেষণা গ্রন্থ রচনার জন্য ‘ডিনস মেরিট অ্যাওয়ার্ড ফর টিচারস’ পান দুই শিক্ষক। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পরে উদ্বোধনী সংগীত ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। উদ্বোধনী পর্বে ‘কলা অনুষদ : শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সাজাহান মিয়া, অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে মো. ইজাজুল করিম ও আজরিন আফরিন প্রমুখ।

এ সময় কলা অনুষদের সাবেক ডিনবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, বিপুলসংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের অভিভাবকবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জনের জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি নিজের ও তাদের পরিবারের জন্য একটি গৌরবের ব্যাপার। সত্য ও সুন্দরের বহিঃপ্রকাশ করে একটি সুন্দর মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পায়, যা একটি সমন্বিত সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মেলবন্ধন তৈরি হয়।

‘ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাও একটি মূল্যবোধ’ উল্লেখ করে উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন, এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখান থেকে যে মূল্যবোধ ধারণ করল তা তাদের ভবিষ্যৎ পারিবারিক ও কর্মজীবনে আরও বিকশিত হবে। উপাচার্য আরও বলেন, পিতা-মাতার প্রতি যে দায়িত্ববোধ শিক্ষার্থীরা লালন করে, একই রকম দায়িত্ববোধ মেধাবীদের কাছে আশা করে মাতৃসম এই প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি বলেন, মতলবি চিন্তা, গুজব, অসংস্কৃতি, অপতথ্য, অপপ্রচার এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে এবং এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের ডেকে কাউন্সিলিং করা, অভিভাবকদের ডেকে পরামর্শ গ্রহণ করা— এসব নারী নির্যাতনের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু কিছু জ্ঞানপাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহৎ উদ্দেশ্য নস্যাৎ করার জন্য নানা ধরনের অপপ্রচার, অপতথ্য, গুজব ছড়াচ্ছে।

মুখ্য বক্তা অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য হলো, তথ্যকে জ্ঞানে রূপান্তর করা এবং জ্ঞানকে প্রজ্ঞায় রূপান্তর করা। প্রজ্ঞা চিরস্থায়ী, তাই জ্ঞানের চর্চা সবসময় জাগ্রত রাখতে হবে। বই জানালা তৈরি করে, যে জানালা দিয়ে জ্ঞান প্রবেশ করে। জ্ঞানের জন্য পরিচ্ছন্ন স্থান প্রয়োজন, পরিচ্ছন্ন চিন্তা-ভাবনা ও জীবন প্রয়োজন। মতলবি স্থানে জ্ঞান বাস করতে পারে না। সংস্কৃতি মানুষকে জাগ্রত রাখে এবং জীবনে পরিশুদ্ধতা আনে। সুন্দর ও সৎ জীবন গঠন করতে শিক্ষার আদর্শ অনুযায়ী মাথা উঁচু রাখতে হবে, এ জন্য দরকার উদার মানবিক চিন্তা, মূল্যবোধ ও আদর্শ।

অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বলেন, শুধু সিজিপি এসব নয়, তোমাদের মানুষ হতে হবে। তোমাদের মধ্যে মানবিকতা থাকতে হবে। তোমাদের মধ্যে থাকতে হবে সততা ও নিষ্ঠা। ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর পূর্ণ হবে। এর ফলে আমাদের সামনে আছে অপার সম্ভাবনা। আর সম্ভাবনার সঙ্গে আছে চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে।

উল্লেখ্য, ‘ডিনস মেরিটলিস্ট অব এক্সসেলেন্স’ (জিপিএ ৪ এর মধ্যে ৪ অর্জনকারী), ‘ডিনস মেরিট লিস্ট অব অনার’ (জিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.৮৫-৩.৯৯ অর্জনকারী) ও ‘ডিনস মেরিটলিস্ট অব একাডেমিক রিকগনিশন’ (জিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.৬০-৩.৮৪ অর্জনকারী) এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে অ্যাওয়ার্ড পান- ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার এবং ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আকসাদুল আলম।

সর্বশেষ খবর